রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) জাল সনদে দীর্ঘ ১০ বছর চাকরি করার পর মাসুদুল আলম নামে এক কর্মচারিকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য পরবর্তী সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াও চলছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাসুদুল আলম ১৯৯৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তবে ১৯৯৬ সালে একই বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। কিন্তু তিনি জাল সনদপত্র সংগ্রহ করে তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওই সনদে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয় ‘প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ’। ওই জাল সনদপত্র ব্যবহার করে তিনি ২০০২ সালে রাবির লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে অনার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। একই বিভাগ থেকে ২০০৩ সালে মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। পরে ওই একই সনদপত্র দিয়ে তিনি রাবির অধীনে থাকা বরেন্দ্র গবেষণা যাদুঘরে উচ্চমান সহকারি পদে যোগদান করেন। বর্তমানে কোষাধ্যক্ষ দপ্তরে উচ্চমান সহকারি পদে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে মাসুদুল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি ওই কর্মচারীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পায় কর্তৃপক্ষ। পরে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে ওই কর্মচারির শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত তথ্য জানতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ আগস্ট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে (স্মারক নম্বর- ৮৭৪) জানানো হয়, ‘মাসুদুলের এইচএসসি সার্টিফিকেটের সঙ্গে বোর্ডের রেকর্ডে থাকা নথিতে কোনো মিল নেই।’ চিঠিতে আরও জানানো হয়, ‘মাসুদুল আলম ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাসদুল আলমের ভুয়া সনদপত্রের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গত বৃহস্পতিবার তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। এছাড়া তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য পরবর্তী সিন্ডিকেটে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মাসুদুল আলমের বিরুদ্ধে জালিয়াতি মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে তার অনার্স ও মাস্টার্সের সনদ বাতিলের প্রক্রিয়াও চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাসুদুল আলম বলেন, ‘আমার এইচএসসির সনদপত্র জাল নয়। আসলে কর্মচারি ইউনিয়নে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন করায় আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর এন্তাজুল হক বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষাবোর্ডে তার সনদ যাচাইয়ে আবেদন করা হয়। পরে শিক্ষাবোর্ড থেকে সনদপত্রটি ভূয়া বলে নিশ্চিত করলে তাকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। পরবর্তী সিন্ডিকেটে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।