দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আজ মুখোমুখি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। চলতি বছর এবারই প্রথম দুই প্রতিপক্ষ সমান প্রস্তুতি নিয়েছে বড় শো-ডাউনের। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। তবে কোন ধরনের বাধা দেয়া হলে ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারিও দিয়েছে উভয় পক্ষ। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে সহিংসতার আশঙ্কা। তবে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনা সভাটি শুরু হবে বিকাল চারটায়। অন্যদিকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের সকল জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ কয়েকটি পয়েন্টে মানববন্ধন করবে বিরোধী জোট। আওয়ামী লীগের সমাবেশের কাছাকাছি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ২০ দল মানববন্ধনের আয়োজন করলেও গতকাল সন্ধ্যায় স্থান পরিবর্তন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি আগস্ট মাসের সূচিতেই ছিল। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচিটি এসেছে সমপ্রতি। তারা পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাঁধাতে চায়। এর আগে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত বর্ধিত সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামও বিএনপিকে হুঁশিয়ার করেন। তিনি বলেন, সংঘাত এড়াতে চাইলে বিএনপির উচিত মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা। জবাবে বিএনপির মহানগর নেতারা বলছেন, আমাদের কর্মসূচি আমরা করবো, তাদেরটি তারা। আমরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারতো করতে বলছি না, তারা কেন বলবে? এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা গতকাল সভাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা সভাস্থলে মঞ্চ নির্মাণ, মাইক বসানোর কাজ দেখেছেন। সভার প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ঢাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারে আমাদের নেতাকর্মীরা আলোচনা সভায় যোগ দেবে। আমাদের সভায় আসা-যাওয়ার পথে বিএনপির লোকেরা কোনও বাধা দিতে এলে দাতভাঙা জবাব দেয়া হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলাকারীদের দেখলে উত্তম-মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচির প্রস্তুতি কার্য পরিদর্শনকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, পৃথিবীর অন্য সব দেশেও এ রকম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তাই বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার জন্য বলা যাবে না যে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিএনপির আন্দোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিএনপি এখন আন্দোলনের কথা বললে মানুষ হাসে। আমরাও না হেসে পারিনা। তবে বিএনপি আন্দোলনের নামে পায়ে পাড়া দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার ফল ভালো হবে না। এ থেকে তাদের সাবধান থাকা উচিত। তিনি বলেন, আমরা সহিংসতার আশঙ্কা করছি না। তবে বিএনপি উস্কানি দিয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করলে তাদের মূল্য দিতে হবে। একটা বিষয় পরিষ্কার বলছি, দেশের মানুষ এখন অনেক শান্তিতে আছে। বিএনপি-জামায়াতকে অনেক ছাড় দিয়েছি। কোন রকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ওদিকে মানববন্ধন সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গুম-অপহরণ করে হত্যা করা হচ্ছে। বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ এরকম রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আজ সোচ্চার হয়েছে। কাল দেশে দেশে আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালন করা হবে। আমরাও পালন করব। রিজভী বলেন, বরাবরের মতোই আমাদের কর্মসূচি জনমুখী ও শান্তিপূর্ণ। বিএনপি কখনও সহিংসতায় বিশ্বাস করে না। এদিকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে কাজ করবো। সকাল থেকেই মাঠে থাকার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। কোনরকম সহিংসতা সহ্য করা হবে না। বরং তেমন লক্ষ্মণ দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।