শায়খ নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ তিন’জনকে আটক করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া থেকে গতকাল সকালে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে মাহমুদা খাতুন (৪৬) ও শরিফুল ইসলাম (৩৬)। এ মাহমুদাই ফারুকী হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে তার বাসায় ছিল। হত্যাকাণ্ডে সে জড়িত কিনা এ বিষয়ে গ্রেপ্তারের পর মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার দিন বুধবার বিকালে ফারুকীর বাসায় যাওয়ার বিষয় স্বীকার করেছে মাহমুদা। তবে সে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় পঞ্চগড়ের নিজ বাড়িতে ফারুকীর লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে, ইসলামী ফ্রন্টের নেতা ফারুকীর খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে ইসলামী ছাত্রসেনা।
ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক মাহমুদা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে ফারুকীর একজন ভক্ত। অনেক দিন ধরেই ফারুকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা ছিল তার। এজন্যই সে গত বুধবার ফারুকীর বাসায় গিয়েছিল। খুনিদের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, মাহমুদার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে ওই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। তাই মাহমুদা ও শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে আরও তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। সূত্রমতে, নিহত ফারুকীর মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করেই মাহমুদার অবস্থান শনাক্ত করে পুলিশ। এ ব্যাপারে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মুন্সি সাব্বির আহমেদ জানান, মাহমুদার মোবাইল ফোনের অবস্থান নির্ণয় করেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া থেকে গতকাল সকালে তাকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের সূত্র ধরেই শরিফুলকে আটক করা হয়েছে। শরিফুলের বাড়ি মুড়াপাড়া হলেও মাহমুদা সেখানে ভাড়া বাসায় থাকে। তার বাড়ি সাতক্ষীরা। বুধবার রাতে ফারুকীকে হত্যার আগে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে তার বাসায় গিয়েছিল মাহমুদা। বাসায় যাওয়ার আগে একাধিকবার মোবাইল ফোনে ফারুকীর সঙ্গে কথা বলেছে সে। ওই সময়ে ফারুকীর বাসায় অবস্থানকারী আহমেদ নুরী জানিয়েছেন, ফারুকীকে মাহমুদা বলেছিল সে বরিশালের শর্শিনা পীরের মাজার থেকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছে। পরে ফারুকীর স্ত্রী লুবনা কুলসুমকে বলেছে তার বাড়ি সাতক্ষীরা। ফারুকীর পরিবারের সদস্যদের ধারণা বাসা সম্পর্কে তথ্য নেয়ার জন্যই কিলিং মিশনের আগে দুর্বৃত্তরা মাহমুদাকে পাঠিয়েছিল। তার ক্লিয়ারেন্স পেয়েই প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর দুর্বৃত্তরা ফারুকীর বাসায় ঢোকে। তারা পরিবারের সদস্যদের অস্ত্র উঁচিয়ে জিম্মি করে চোখ ও হাত বেঁধে রাখে এবং গলা কেটে ফারুকীকে হত্যা করে।
হরতাল: ফারুকীর খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বিকাল ৪টায় ফকিরাপুলে আল বশির প্লাজার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের ঘোষণা দেন ছাত্রসেনার সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতী। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে রোববার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করা হবে। কিন্তু কোন গোষ্ঠী যদি গাড়ি ভাঙচুর বা অরাজকতা সৃষ্টি করে তার জন্য ছাত্রসেনা দায়ী থাকবে না। নুরুল হক চিশতী বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থিরাই তাকে হত্যা করেছে। এজন্য তিনি ইসলামী অনুষ্ঠানের বক্তা আরকানউল্লাহ হারুনী, তারেক মনোয়ার, কামালউদ্দিন জাফরী, খালিদ সাইফুল্লাহ বকশী ও মুফতি ইবরাহিমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফ্রন্টের সহ অর্থ সচিব আবদুল হাকিম, যুব সেনার সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মাহমুদ, ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাসুদ হোসাইন প্রমুখ।
ফারুকীর দাফন সম্পন্ন: গতকাল সকাল ১১টায় পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে নুরুল ইসলাম ফারুকীর লাশ দাফন করা হয়েছে। তার আগে কবরস্থানের পাশে তার নামাজের জানাজা হয়। এতে ইমামতি করেন মরহুমের ছেলে আহমেদ রেজা ফারুকী। নামাজের জানাজায় পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, বোদা উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদ চেয়ারম্যান সফিউল্লাহ সুফি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আউয়াল, ফারুকীর ভাই আবদুর রউফ, সন্তান মাসুদ রেজা ফারুকী, ফয়সাল ফারুকী, ফুয়াদ আল মাহদী ফারুকীসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। শনিবার ভোরে লাশবাহী গাড়ি মরহুমের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। গাড়িটি সকাল থেকে নাউতারী নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়। সেখানে স্বজন ও আশপাশের লোকজন শেষবারের মতো ফারুকীর লাশ দেখতে ভিড় করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে ইউসুফ নামে আরো একজনকে আটক করা হয়েছে।