দুবাইয়ে চাকরিরত মিনারা বেগম (৪০) নামের এক নারী শ্রমিকের খোঁজ পাচ্ছে না তার পরিবার। পরিবারের দাবি, দুবাইয়ে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মমতাজ নামে এক বিউটি পার্লার ব্যবসায়ীর কাছে তাকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ বছরের মার্চ মাসে তিনি চাকরির ভিসা নিয়ে দুবাই যান। এরপর গত দেড় মাস থেকে মিনারার সঙ্গে পরিবারের কোন যোগাযোগ নেই। এদিকে মেয়ের সন্ধান চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বেশ কয়েকটি দপ্তরে আবেদন করেছেন মিনারার পিতা আবুল কাশেম। মিনারার গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলার চর ভুতাবাজার।
দুবাই পৌঁছে মিনারা তার পিতা আবুল কাশেমকে ফোনে জানান যে, তাকে সেতারার বোন নাজমা এয়ারপোর্টে রিসিভ করেছেন। এরপর তাকে মমতাজ নামে এক মহিলার বিউটি পার্লারে কাজ দেয়া হয়েছে। মমতাজ ও নাজমা এক সঙ্গে ব্যবসা করেন। মিনারা আরও জানান, ঈদুল ফিতরের আগে ৫০ হাজার এবং ঈদুল আজহার আগে তিনি বাড়িতে দেড় লাখ টাকা পাঠাবেন। কিন্তু ঈদুল ফিতরের আগে মমতাজ মিনারাকে জানিয়ে দেন, নাজমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে কিনে নেয়া হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত তার বেতন দেয়া হবে না। এ ঘটনার পর থেকে মিনারার আর কোন খোঁজ মিলেনি। এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, গত মার্চ মাসে মিনারা বেগম নামে এক মহিলা দুবাই যেতে না পেরে সেতারার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। সে সময় দু’জনের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করা হয়। এরপর আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আবুল কাশেম জানান, ২০১৪ সালের বছরের ২১শে মার্চ চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে রাত নয়টার ফ্লাইটে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন মিনারা। সেখানে তার ভগ্নিপতি তাকে বিদায় জানান। মাস দেড়েক আগে মিনারার স্বামী লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের একমাত্র মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আবুল কাশেম আশঙ্কা করছেন, বেতনের টাকা পরিশোধকে কেন্দ্র করে মিনারাকে মেরে ফেলা হতে পারে। কিংবা তাকে জেলে আটকে রাখা হতে পারে। এ অবস্থায় আবুল কাশেম মেয়ের সন্ধান চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছেন। সেতারা বেগমের সঙ্গে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ম্যাসেজ পার্লারে চাকরি দিয়ে মিনারাকে দুবাই পাঠিয়েছিলাম। সেখানে আমার বোনের কাছে সে থাকতো। পরবর্তীকালে সে অন্যত্র পালিয়ে যায়। আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানি না।
আবুল কাশেম জানান, তার বড় মেয়ে মিনারা পুরান ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। এ বছরের শুরুতে তাকে দুবাইয়ে পাঠানোর জন্য দোহারের জয়পাড়া গ্রামের সেতারা বেগম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা নেয়। এরপর তাকে দুবাইয়ে পাঠানোর কথা বলে বিমানে করে দিল্লি পাঠায়। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দিল্লি পুলিশ দু’দিন আটক রেখে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় তাকে। বাংলাদেশ পুলিশের হেফাজত থেকে সেতারা বেগম আবার তাকে দোহারে নিয়ে আসে। সেখানে সেতারা ও তার মেয়ে পারভীন আকতার মিলে মিনারাকে মারধর করে ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মিনারা বেগম দোহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ৯৪৭) করে। থানার এএসআই রফিক এর পরদিন সেতারা ও মিনারাকে থানায় ডেকে নেন। থানায় বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় মিনারা দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভূঁইয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার হস্তক্ষেপে সেতারা বেগম বৈধ ভিসায় মিনারাকে দুবাইয়ে পাঠাতে রাজি হয়। সেতারা বেগম প্রতিশ্রুতি দেয়, দুবাইয়ে যাওয়ার পর মিনারা ম্যাসেজ পার্লারে কাজ করবে। সে সপ্তাহে অন্তত একদিন বাসায় ফোনে কথা বলবে।