রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার সদরে ৬টি ও বানেশ্বরে ২টি বে-সরকারী ক্লিনিক রয়েছে।বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় ডজনেরও বেশী প্যাথলোজি এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। যার বেশীর ভাগ ক্লিনিক প্যাথলোজি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকরা মেয়াদ উর্ত্তীন ও নামমাত্র কাগজ পত্র নিয়ে নিজেরাই ডাক্তার সেজে চিকিৎসা সেবার নামে সাধারন রোগীদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারনা করছে। আবার প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিশেষ কমিশন ভিক্তিক একাধিক দালাল নিয়োগ করেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, হাতে গোনা দু’একটি ক্লিনিক ছাড়া বাকি সব গুলোতেই মালিক-কর্মচারীরা নিজেরাই রোগীদের অজ্ঞান, অস্ত্রোপচার ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে। এরই শিকার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার ময়না বেগম (২২)। সে গত ১৭ আগষ্ট পুঠিয়া নিউ জনসেবা ক্লিনিকে সির্জারের মাধ্যমে একটি সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু ডাক্তার ছাড়াই ক্লিনিকের কর্মচারী জাকির তাকে সির্জার কাজ করে। এতে ময়না বেগমের মুত্রনালী কেটে যায়। এরপর থেকে ময়না রামেক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
গত বছর এই ক্লিনিকে একই ঘটনার শিকার হয় উপজেলার শরিষাবাড়ী গ্রামের রাফিয়া বেগমের। সে কাটা মুত্রনালী নিয়ে গত এক বছর যাবত প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যায়ে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করিয়েও কোনো সুফল পায়নি। এ বিষয়ে থানা পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতায় ক্লিনিকে মালিক ক্ষতি পূরণ হিসাবে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দেয়।
সল্প খরচায় উন্নত চিকিৎসা সেবার প্রলোভন দিয়ে রাজশাহীর পুঠিয়ায় গড়ে উঠেছে ৮টি বে-সরকারী ক্লিনিক, দেড় ডজন প্যাথলোজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। সরকারী বিধি না মেনে বিভিন্ন নামীদামী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিষেজ্ঞ ডাক্তারগনের নাম ব্যবহার করে সাধারন রোগীদের সাথে প্রতারনা করছে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীরা নিজেকে ডাক্তার সাজিয়ে করছে অস্ত্রোপচার। অনেক ক্লিনিক-প্যাথলোজি মালিকরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে বিষেজ্ঞ ডাক্তারের ভুয়া সীল সহি ব্যবহার করছে। আবার ক্লিনিক গুলোতে বিষেজ্ঞ ডাক্তার, নার্স ও পর্যাপ্ত লোকবল নেই। রোগীরা রোগমুক্তির আসার চিকিৎসা নিতে এসে এই প্রতারনা চক্রের শিকার হয়ে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ধাবিত হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে দিনদিন এর প্রভাব বেড়েই চলেছে।
দালালেরা প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যেরাত পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে−¬ক্রা ও গ্রাম থেকে রোগী সংগ্রহ করে আনে। তারা সাধারন রোগীদের অল্প খরচে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বড় বড় ডাক্তার দ্বারা ভালো চিকিৎসা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে আসে। অপরদিকে পুঠিয়া সদরে দু’টি ও বানেশ্বরে একটি ক্লিনিকে এই ভূল অপারেশনে গত কয়েক বছরে ৪ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। পুঠিয়া সদরে একটি প্যাথলোজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক নিজেকে ডাক্তার সাজিয়ে বাঘা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়ায় ৪টি ক্লিনিকে বিভিন্ন রোগীদের অজ্ঞান, অস্ত্রোপচার ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে। তার অস্ত্রোপচারের দুর্গাপুরে ৩টি, বাঘায় ২টি ও পুঠিয়ায় ২জনের প্রাণহানী ঘটেছে। জানাগেছে, সে তথা কথিত ডাক্তার পরিচয়দানকারী মাত্র ৮ম শ্রেণী পাস। ক্লিনিক-প্যাথলোজি সেন্টারের উপরে বিভিন্ন বিষেজ্ঞ ডাক্তারের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখে মালিকরা। আর এতে ডাক্তার নামে জল¬াদ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং অস্ত্রোপচার করার ফলে অনেক অসহায়ের রোগী মৃত ও পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।
আগষ্ট পুঠিয়া নিউ জনসেবা ক্লিনিকের মালিক আশাদুজ্জামান জানায়, একটি ভালো সার্জন দিয়ে চিকিৎসা দিলে রোগী প্রতি ব্যায় হবে ৭-১০ হাজার টাকা। কিন্তু রোগীরা ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বেশী দিতে চায় না । এতে চিকিৎসার মান কিছুটা কম হচ্ছে। অপরদিকে তিনি আরো জানায়, শুধু আমার এখানেই নয়, পুঠিয়ায় যত ক্লিনিক আছে সব গুলোতেই ডাক্তারের নামে দক্ষ সহকারীরা অস্ত্রোপচার করছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট খোন্দকার ফরহাদ আহমদ জানান, ক্লিনিক-প্যাথলোজি গুলোতে চিকিৎসার মান অনেক কম। এতে মাঝে মধ্যেই এ সকল ক্লিনিক-প্যাথলোজি গুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি আল-মাহাদী ও পুঠিয়া জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান খারাপ হওয়ায় তাদের জরিমানা করা হয়েছে। এই সকল অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে অচিরেই আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. সোহরাব হোসেন জানান, নিয়ম অনুসারে ক্লিনিক গুলোতে একজন ডাক্তার সকল প্রকার অস্ত্রোপচার, অজ্ঞান করতে পারবে না। আর পুঠিয়াতে কোন কোন ক্লিনিকে এ সকল কর্মকান্ড ঘটে সে বিষয়ে আমার নিকট কোনো অভিযোগ আসেনি। আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।