স্টেডিয়াম ক্ষতিগ্রস্ত করে প্যান্ডেল- মাঠে বালি ফেলে প্রশস্ত রাস্তা, আর সরকারি অফিসের দেয়াল ভেঙে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। চারদিকে সাজসাজ রব। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ব্যস্ততা শ্রমিকদের। যেন এক এলাহী কাণ্ড।
সব মিলিয়ে রাজকীয় আয়োজন বললেও কম বলা হবে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মেয়ের বিয়ে বলে কথা। এ নিয়ে মৌলভীবাজারে চলছে মহাআয়োজন।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরই শিশুদের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ধূমপান, গণমাধ্যম কর্মীদের ‘খবিশ’ বলে গালি দেয়া, অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে ঘুমিয়ে পড়ার মতো ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। এবার নিজ এলাকায় নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তার দ্বিতীয় মেয়ের বিয়ে নিয়ে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রীর দ্বিতীয় মেয়ে সৈয়দা সানজিদা শারমিন সানজুর বিয়ের অনুষ্ঠান হবে মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে। এজন্য স্টেডিয়াম ও পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউসজুড়ে চলছে বিশাল আয়োজন। শহরের রঘুনন্দনপুরে অবস্থিত স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে খেলাধূলার উপযোগী সবুজ মসৃণ মাঠের যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি করে দুটি প্যান্ডেল বানানো হয়েছে। এজন্য ৮-১০ দিন ধরে মেঘনা ডেকোরেটর্সের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য এ দুটি প্যান্ডেলের পাশাপাশি রান্নার জন্য আলাদা আরেকটি প্যান্ডেল হবে।
এদিকে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলে মাঠে কাদা থাকায় স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক থেকে প্যান্ডেল পর্যন্ত মাঠে বালু-পাথর ফেলে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় বড় ট্রাকে করে বালু এনে ফেলার পর রোলার দিয়ে তা সমান করা হচ্ছে। বিয়েতে অনেক সম্মানিত অতিথি আসবেন, যাদের থাকবে গাড়ি। এত গাড়ির পার্কিং স্টেডিয়ামের সামনের জায়গায় হবে না। এজন্য পার্শ্ববর্তী পাউবো কার্যালয়ের সীমানা প্রচীর ভেঙে সেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্টেডিয়ামে সাজসজ্জার দায়িত্ব পাওয়া মৌলভীবাজারের মেঘনা ডেকোরেটর্সের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজ জানান, স্টেডিয়ামে ২ হাজার ও ৫শ’ অতিথির জন্য আলাদা দুটি প্যান্ডেলের পাশাপাশি রান্নার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবসময় তাদের (মন্ত্রীর বাড়ির) কাজ করি বলে টাকাপয়সা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বিশাল এ আয়োজনের জন্য ঢাকা থেকেও সরঞ্জাম এনেছেন বলে জানান মো. সিরাজ।
প্যান্ডেলের পাশাপাশি চলাচলের রাস্তা ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা প্রস্তুতের সব কাজই মেঘনা ডেকোরেটর্সের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। এতে মাঠের ব্যাপক ক্ষতি হলেও মন্ত্রী তা ঠিক করে দেবেন বলে জানান মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মিজবাউর রহমান।
তিনি বলেন, তিনি (মহসিন আলী) পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকার সময় থেকেই আমাদের সহযোগিতা করে আসছেন। তাই তাকে না করতে পারিনি। তিনি জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য গত ১৮ বা ২০ আগস্ট নাগাদ মন্ত্রী লিখিতভাবে তাদের কাছে আবেদন করেন। এর বিপরীতে তারা টোকেন মানি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও পরিমাণ জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন মিজবাউর। তিনি প্যান্ডেলের জন্য গর্তের পাশাপাশি চলাচলের রাস্তা করতে বালু ফেলায় মাঠের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, যেখানে বালু ফেলা হচ্ছে, সেখানে কাদা হয়ে যায়। এজন্য বালু ফেলায় একদিকে ভালোই হচ্ছে।
পার্কিং-এর জায়গা করতে গিয়ে স্টেডিয়ামের ফটকের পার্শ্ববর্তী সীমানা প্রাচীরের প্রায় ২০ ফুট ও সংলগ্ন পাউবোর রেস্টহাউসের সমপরিমাণ দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। রেস্টহাউসের সামনেও বালু ফেলে রাস্তা উঁচু করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পাউবোর অন্য এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বিয়ের রান্নার জন্য স্টেডিয়াম পর্যন্ত অস্থায়ী গ্যাস সংযোগ নেয়ার কথা শোনা গেলেও জালালাবাদ গ্যাসের মৌলভীবাজার আঞ্চলিক ম্যানেজার সঞ্চিত দেব তা অস্বীকার করেন। এ ধরনের কোনো কিছু জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোথাও সংযোগ নিতে হলে আগে আবেদন করতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে কেউ কোনো ধরনের আবেদন করেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর মেয়ের বিয়েতে ১০ হাজারের মতো আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ১৫-১৬ হাজারের মতো অতিথি আসবেন, যাদের মধ্যে ৪-৫ জন মন্ত্রী থাকবেন। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের সবকটি আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলের শীর্ষনেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের আপ্যায়নের জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি ছাড়াও মাছ, গরু, খাসি, মুরগির বিভিন্ন পদ রান্না করা হবে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মহসিন আলীর দ্বিতীয় মেয়ে সৈয়দা সানজিদা শারমিন সানজুর সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের দত্তপাড়ার শ্রীরামপুর গ্রামের ইব্রাহীম পাটওয়ারীর ছেলে মো. মোশাররফ পাটওয়ারী আনিকের বিয়ে নিয়েই এত আয়োজন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে হলেও বরের পরিবার বর্তমানে ঢাকার শ্যামলী রোড নম্বর ২-এর ১৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা।
বুধবার সন্ধায় এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।