আলোচিত এই ঘটনা তদন্তকারী গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুয়াল খায়ের মাতুব্বরের সঙ্গে সোমবার বিচারকের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাহ আলম তালুকদারকেও।
আইনজীবী শাহ আলম তালুকদার এই সময় আদালতে থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা আবুয়াল খায়ের।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক অভিযোগপত্র নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “কেন এ মামলার অভিযোগপত্রে ঐশীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকারী হাকিমকে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয়নি।
“অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত অনেক সাক্ষীই এই হত্যাকাণ্ডকে দুষ্কৃতকারীর কাজ বলে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেন। তদন্তের কারণেই মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে।”
গত বছরের ১৬ অগাস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধারের পর তাদের তরুণী মেয়ে ঐশী পুলিশের কাছে ধরা দেন।
নিহত স্বপ্না বেগম ও তার স্বামী মাহফুজুর রহমান।
বাবা-মা’কে ঐশীই হত্যা করেছিল বলে পুলিশের দাবি। তবে মামলার বাদী মাহফুজের ভাই মশিহুর রহমান মনে করেন, তার ভাতিজি এই হত্যাকাণ্ড ঘটাননি।
ঐশী হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও পরে তা অস্বীকার করে বলেন, ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল।
সহকর্মী হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে গত ৬ মে ঐশী এবং ‘সহায়তাকারী’ হিসেবে তার দুই বন্ধুর বিচার শুরু হয়।
বাদী মশিহুরের জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর সোমবারের আগ পর্যন্ত ১৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল।
সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে আরো পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়ার সময় বিচারক জহুরুল হক তদন্ত কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুঁলিকে ভর্ৎসনা করেন।
বিচারক এক পর্যায়ে প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রপক্ষের কোন কোন আইনজীবী এ অভিযোগপত্র পর্যবেক্ষণ করে অনুমোদন দিয়েছেন? তাদের পরিচয় জানা দরকার।
উত্তরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাহ আলম তালুকদার তা জানাতে অপারগতা জানান।
মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু এই অভিযোগপত্র পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দেন জব্দ তালিকার সাক্ষী ড. আলী মনসুর, কনস্টেবল মজিবর রহমান, কনস্টেবল তসলিম উদ্দিন, গাড়িচালক ইমান আলী শেখ, ঐশীদের বাসার দারোয়ান আ. মোতালেব।
জবানবন্দি দেওয়ার পর পাঁচ সাক্ষীকে ঐশীর আইনজীবীরা জেরা করলেও রনি ও জনির আইনজীবীরা করেননি।
এই পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর শুনানির জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে আদালত।
এই মামলায় ঐশীদের গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমিও আসামি। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে।
গত ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। তিনি সুমিকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিন দিয়েছেন।