রাজধানীর মগবাজারে তিন খুনের ঘটনায় আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের নাম- আল-আমিন (২৫), সাইফুল্লাহ সিয়াম (২৪), রমজান আলী (২০), রুবেল মিয়া ওরফে সানি (২৫), মারুফ হোসেন (২৬) ও শাফিন লস্কর (২৫)। তাদের কাছ থেকে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি ও তিনটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে মুন্সীগঞ্জ ও
ঢাকার মতিঝিলের টিঅ্যান্ডটি কলোনি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তিন খুনের ঘটনায় এর আগে গত সোমবার প্রধান অভিযুক্ত শাহ আলম খন্দকার ওরফে কাইল্যা বাবু ওরফে কাবলী বাবু ডিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ সময় ডিবি পুলিশ আল-আমিন ও রাজীব হাসান নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার একদিন পর ডিবি কাইল্যা বাবুর বনশ্রীর বাসার কবুতরের খোপ থেকে আরেকটি পিস্তল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ডিবি এর আগে মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল দুপুরে র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ ও গোয়েন্দা শাখার যৌথ একটি দল শুক্রবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ থেকে আল-আমিনকে আটক করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ১২টায় মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনির বস্তি থেকে সাইফুল্লাহ সিয়াম ও রমজান আলীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে দু’টি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করে র্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই বস্তির অপর একটি ঘর থেকে রুবেল, মারুফ ও শাফিনকে তিনটি চাপাতিসহ আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, তিন খুনের ঘটনার দিনে-দুপুরে রামপুরা ব্রিজের ওপর সিয়াম ও কাইল্যা বাবু দেখা করে। তারা কালা চানসহ তার বোন বৃষ্টিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতো সিয়াম সন্ধ্যায় একটি ব্যাগে করে ৩টি চাপাতিসহ রামপুরা দিয়ে হাতিরঝিলে ঢুকে প্রথম ব্রিজের গোড়ায় যায়। এ সময় কাইল্যা বাবু সেখানে দু’টি পিস্তলসহ ওই স্থানে যায়। এদিকে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সদস্য রমজান, রুবেল, শাফিন ও আল-আমিনের সঙ্গে তারা বনশ্রীতে গিয়ে দেখা করে। কাইল্যা বাবু তখন সিয়াম ও রমজানকে দু’টি রিভলবার দেয় এবং বাসে করে সবাই সন্ধ্যায় মগবাজার এলাকায় যায়। পরে একজন একজন করে সোনালীবাগে বৃষ্টিদের বাসার কাছে যায়। টিনশেডের ওই বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দেখে বিল্লাল, মুন্না ও হৃদয় বসে আছে। এ সময় তারা তাদের যা আছে দিয়ে দিতে বললে তারা ৮-১০ বোতল ফেনসিডিল ও ১৫-১৬ পিস ইয়াবা নিয়ে নেয়। পরে হঠাৎ কাইল্যা বাবু এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। তাদের গুলিতে বিল্লাল, মুন্না ও হৃদয় গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায়। সবাই দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে ডান দিকের গলিতে বৃষ্টির বাসার নিচে যায়। সহযোগীদের নিচে থাকতে বলে সিয়াম, কাইল্যা বাবু ও রমজান দোতলায় বৃষ্টির বাসায় উঠে যায়। সেখানে বৃষ্টির সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা কাটাকাটি হয়। পরে বৃষ্টিকে গুলি করে হত্যা করে সবাই পালিয়ে যায়।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সিয়াম শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান বাহিনীর সদস্য। সে ও কাইল্যা বাবু ছোটবেলার বন্ধু। ২০০৫ সালে জিসানের নির্দেশে সিয়াম ইস্কাটনে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গুলি চালায়। ২০০৭ সালে পল্টনে অটো মিউজিয়ামেও জিসানের নির্দেশে চাঁদাবাজির জন্য গোলাগুলি করলে একজন নিরাপত্তাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। একই বছর ফকিরাপুলে ঈগল কাউন্টারের সামনেও গোলাগুলি করে। সে ২০০৮ সালের মগবাজারের আলোচিত অপু মার্ডার মামলারও অন্যতম আসামি। এ ছাড়া ২০১২ সালে কুষ্টিয়ায় সালমা নামের এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। অপর ঘাতক শাফিন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান গ্রুপের সদস্য। সে তিন মাস আগে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। শাফিন এর আগে আরও দু’টি হত্যা মামলায় দু’বার জেলে ছিল। সে ২০০৯ সালে বাড্ডায় তোবা গ্রুপের মালিক দেলোয়ারের শ্বশুর হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। গত বছর মালিবাগ সুপার মার্কেটের মালিকের ছেলে হত্যা মামলায়ও সে ৭ মাস জেল খাটে। এ ছাড়া মাদক মামলায় শাফিন ২০০৭ সালে জেলে ছিল। ঘাতক আল-আমিনের বিরুদ্ধে রমনা ও রামপুরা থানায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মারামারি ও মাদকের মোট ৫টি মামলা রয়েছে। সে ২০০২ সালে রমনা থানায় একটি মারামারি মামলার ১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। ঘাতক রুবেলের বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় একাধিক মারামারির মামলা আছে।