আগের কলমানি মার্কেট (আন্তঃব্যাংক লেনদেন) নেই। যখন দৈনিক লেনদেন হতো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। সুদ ওঠানামা করতো প্রায় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশে। বিনিয়োগ না থাকায় এ দশা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। পরে লেনদেন নেমে আসে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকায় আর সুদ ওঠানামা করতো পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ শতাংশে। কিন্তু মন্দের ভাল হলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে কলমানি মার্কেট ধীরে-ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে। বর্তমানে লেনদেন বেড়ে হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। সঙ্গে সুদের হারও বেড়ে ওঠানামা করছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশে। জানা গেছে, অতিরিক্ত গ্রাহক চাহিদায় ব্যাংকে নগদ অর্থের টান পড়ে। এ অবস্থায় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার করে। যাকে বলা হয় কলমানি মার্কেট (আন্তঃব্যাংক) লেনদেন। সাধারণত ঈদ এলে এ ধরনের লেনদেনের চাহিদা বাড়ে। তখন নগদ লেনদেন হতো। সঙ্গে সুদের হারও থাকতো চড়া। কিন্তু এ পরিস্থিতি মুক্ত ছিল রমজানের ঈদ। বিনিয়োগ নেই। তাই অর্থসঙ্কটও ছিল না। সে কারণে পারতপক্ষে কেউ ধারের দিকে এগোইনি। কিন্তু এবার ঈদের বাকি ১০ দিন হলেও ইতিমধ্যে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে কলমানি রেট ও লেনদেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, কলমানির উচ্চাবস্থার মানে বিনিয়োগ বেড়েছে ব্যাপারটি এমন নয়, বরং রমজানের তুলনায় কোরবানির ঈদে গরু ক্রয়সহ টাকার দরকার হয় বেশি সে কারণে কলমানি মার্কেট হাই দেখাচ্ছে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২৪শে সেপ্টেম্বর কলমানি মার্কেটে দৈনিক লেনদেন ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা দু’ সপ্তাহ আগেও ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এ লেনদেনে অংশ নেয় ৩১টি ব্যাংক ও ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ সময় সুদের হার ছিল প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও কোরবানের ঈদ হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সঙ্কট কিছুটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে নতুন করে সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা ছেড়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি নতুন টাকা ও বাকিগুলো রি-ইস্যুকৃত টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় খাতের অধিকাংশ ব্যাংক কলমানি মার্কেটে টাকা ধার করছে। বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ও নতুন অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ধার নেয়ার প্রবণতা বেশি। আর দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কলমানি মার্কেটের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন কলমানি মার্কেট থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়ে চলছে। ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে এক লাখ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এর মধ্যে একেবারে অলস পড়ে আছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে যেন মূল্যস্ফীতি বাড়াতে না পারে, সে বিবেচনায় বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হারও (সিআরআর) বাড়ানো হয়েছে। গত ২৩শে জুন সিআরআর বাড়ানোর পর থেকে দৈনিক গড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এরপরও ব্যাংকগুলোর কাছে অলস অর্থ থাকায় বিভিন্ন ব্যাংক দৈনিক গড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রিভার্স রেপোতে খাটাচ্ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মানবজমিনকে জানান, দেশে বড় কোন বিনিয়োগ নেই। ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই। সে কারণে নগদ অর্থের উল্লেখযোগ্য লেনদেনেরও প্রয়োজন নেই। তবে কোরবানির ঈদে নগদ অর্থের দরকার হয়। সে কারণে কলমানি মার্কেট কিছুটা নড়াচড়া করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, বিনিয়োগের সঙ্গে পুরো ব্যাংকিং সেক্টর সম্পৃক্ত। বর্তমানে সে বিনিয়োগ-ই নেই। তাহলে কিভাবে কলমানি মার্কেট চাঙ্গা হবে। যেটুকু হচ্ছে কোরবান বলে হচ্ছে। তিনি বলেন, কলমানি মার্কেটের দরকার তখন হয়, যখন গ্রাহকের অতিরিক্ত চাপে স্বাভাবিক অর্থে টান পড়ে। এখন টান তো দূরে থাক। আসলের স্তূপ হয়ে আছে ব্যাংকগুলোতে। তবে কোরবানীর ঈদ হওয়ায় কিছুটা চাঙ্গা হবে কলমানি মার্কেট, তাও আশানুরূপ নয় বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।