এক সপ্তাহেও জানা যায়নি ১৩ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য। কথা ছিল ৭ কর্মদিবসে জানা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংক তথ্য জমা দেয়নি। সূত্র জানায়, অর্থপাচারের মতো স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় ব্যাংকগুলো খুব সতর্কতা অবলম্বন করছে। কোন কোন ব্যাংক সময় চেয়েছে। দেখে শুনে সাবধানতার মাধ্যমে এসব তথ্য দেয়া হবে বলে কয়েকটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। একাধিক ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মানবজমিনকে জানান, চিঠিতে ৭ কর্মদিবস উল্লেখ ছিল। ৭ম দিবস হয় রোববার। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, সে কারণে তথ্য দেয়া হবে দেখে শুনে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাসিরুজ্জামানের মানবজমিনকে জানান, এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো এখনও সময় আসেনি। তবে বিএফআইইউ অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কিছু ব্যাংক তথ্য জমা দিয়েছে। অনেক ব্যাংক তথ্য জমা দেয়নি, তারা আরও সময় চেয়েছে বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে। সম্প্রতি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সন্তানসহ ১৩ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রায় ১১ দিন আগে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সব ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউ মুদ্রা পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে তদন্ত করে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সংস্থার (দুর্নীতি দমন কমিশন, সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল) তদন্তের জন্যও তথ্য নিয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের একমাত্র সন্তান রাহগীর আল মাহী এরশাদ (সাদ)-এর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চেয়েছে বিএফআইইউ। ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে সাজেদুল হক চৌধুরী (দীপু চৌধুরী)-এর ব্যাংক হিসাবেরও। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মায়া প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় দীপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি নূর হোসেনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও ঢাকা মহানগর যুবলীগের সভাপতি (দক্ষিণ) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংকের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডে সম্রাটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। দলীয় নেতা একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের পর বিতর্কের মধ্যে থাকা ফেনী সদরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নামও এ তালিকায় রয়েছে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ ও তার ছেলে রাজিব সিরাজ, সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান (প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের ছেলে), সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম (সিলভার সেলিম), চাঁদপুর জেলা সভাপতি শেখ ফরিদউদ্দিন মানিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। এছাড়া তথ্য চাওয়া হয়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন, বিলুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মো. হারুনের ব্যাংক হিসাবের। ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তির নামে বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন হিসাব অতীতে ও বর্তমানে পরিচালিত হয়ে থাকলে উক্ত হিসাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল, টিপি, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী) আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে। অন্য এক চিঠিতে বিএফআইইউ ইত্তিহাদ ক্রিস্টাল কার্গোর বাংলাদেশ এজেন্ট জিএসএ কার্গো লিমিটেড, ইত্তিহাদ ক্রিস্টাল কার্গোর শ্রীলংকার এজেন্ট স্পিড এয়ার কার্গো নেট (প্রাইভেট) লিমিটেড, অলপোর্ট ইউকে, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি এজেন্ট স্পিড মার্ক ট্রান্সফোর্টেশন (বিডি)লিমিটেড, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের জিএসএ ইউনাইটেড এভিয়েশন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।