পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামড়া ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় চাকু, চাপাতি, বঁটি, দাসহ নানা ধরনের উপকরণের। কোরবানির সময় দেশে লাখ লাখ পশু জবাই করা হয়। আর তাই কোরবানির আগমুহূর্তে কামারের দোকানে ছোটেন কোরবানিদাতারা।
ফলে অন্যান্য বছরের মতো এবারও কামারের দোকানে এসব উপকরণের বেচাবিক্রি ভালো। শুধু যে নতুন দা-বঁটি কেনার জন্যই লোকজন কামারের দোকানে আসেন তা নয়, আসেন পুরোনো দা-বঁটি শাণ দিতেও।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই এসব দোকানে আসছেন। আর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব উপকরণ।
গুলশানের নিকেতন থেকে চাপাতি ও বঁটি কিনতে এসেছেন বোরহান উদ্দিন। একটি দোকান থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে দুটি চাপাতি ও তিনটি বঁটি তৈরি করিয়ে নিয়েছেন তিনি। বললেন, ‘হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে লোহা কিনে এনে এখান থেকে এগুলো বানিয়ে নিলাম।’বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে দোকানি আল-আমিন বলেন, ‘ভালো বিক্রি হচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে শুরু করে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বিক্রি আরও বাড়বে।’ সারা বছর কীভাবে ব্যবসা করেন—জানতে চাইলে তিনি জানান, ছেনি, হাতুড়ি, শাবলসহ নির্মাণকাজে ব্যবহার হয়—এমন লোহার যন্ত্রপাতিও বিক্রি করেন।
কয়েকজন কামারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম।
লোহার মানভেদে একটি দা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ৫০ থেকে ২০০, পশু জবাইয়ের বিশেষ ছুরি ৩০০ থেকে আড়াই হাজার, কুড়াল ৫০০ থেকে ৭০০, বঁটি ২০০ থেকে ৫০০, চাপাতি ৫০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয় কারওয়ান বাজারে।
তবে দেশীয় এসব দা-বঁটির পাশাপাশি চীন থেকে আমদানি করা বিভিন্ন মান ও আকারের ছুরি-চাপাতিও বিক্রি হয় এখানে। পাওয়া যায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
চীনের উপকরণগুলোর বিক্রি কেমন জানতে চাইলে এক দোকানি জানান, দেশীয় উপকরণগুলোরই বিক্রি বেশি। তবে আমদানি করা উপকরণগুলো দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় তা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা সমাগম বেশ ভালো। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতারা উপকরণ দেখছেন, দরদাম করছেন। এমনই একজন তেজকুনীপাড়া থেকে আসা আবদুল আউয়াল। ৫০০ টাকায় একটি চাপাতি ও ৫০ টাকায় একটি চামড়া ছাড়ানোর ছুরি কিনেছেন তিনি। এসব কিনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন,”খুব বেশি রাখে নাই। আমি খুশি।’