সফরকারী জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ ‘এ’ দলই। প্রথম ওয়ানডেতে হার দিয়ে শুরু করলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সমতা ফিরিয়েছিল মার্শাল আইয়ুবের দল। তাই গতকালের ম্যাচটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী। ফতুল্লায় শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৩১ রানের জয় পায়। বাংলাদেশ ‘এ’ টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ২৪০ রানের টার্গেট দেয় জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলকে। আর জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের স্পিনারদের ভেলকিতে ২০৮ রানে থেমে যায় সিবান্দার দল। তবে শেষ মুহূর্তে লুকি আর কামুনগুজির প্রতিরোধে সব উইকেট না পড়লেও দলকে জয় উপহার দিতে পারেনি এই দুই ব্যাটসম্যান। দলের নিয়মিত স্পিনার ইলিয়াস সানি ৩টি ও মুমিনুল হক সৌরভ ৩টি উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের ব্যাটিং ইনিংসে ধস নামান। ম্যাচে বাংলাদেশ ‘এ’ স্পিনাররা দখল করেন ৮টি উইকেট। তবে সিরিজ জিতলেও অধিনায়ক মার্শাল আইয়ুবের আক্ষেপ হোয়াট ওয়াশ করতে না পারা ও তার এই সিরিজে ভাল পারফরমেন্স না করা। গতকাল সিরিজ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘আমরা যদি হোয়াইট ওয়াশ করতে পারতাম খুব ভাল হতো। তবে সবাই চেষ্টা করেছে। আর আমি বলবো এই সিরিজ থেকে ভাল কোন প্রাপ্তি নেই।’
২৪০ রানের টার্গেটে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের শুরুটা ছিল মারমুখী। প্রথম ৫ ওভারে স্কোর বোর্ডে ৩২ রান যোগ করেন দুই ওপেনার। কিন্তু পরে নিয়ন্ত্রণ নেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকানো চাকাভাকে ৮ রানেই সাজঘরের পথ দেখান ইলিয়াস সানি। স্কোর বোর্ডে আর কোন রান যোগ না করেই সানির দ্বিতীয় শিকার মুতুমবদজি। ০ রানেই ফিরেন এই ব্যাটসম্যান। এরপর জিম্বাবুয়ে দলের স্কোর বোর্ডে ৬৪ রান যোগ হতেই লিখন ও মোসাদ্দেক তুলে নেন আরও দুটি উইকেট। তবে ওপেনার ব্রায়ান চারিকে নিয়ে ২৫ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন অধিনায়ক সিবান্দা। ৪ রান করা মারুমাকে ফিরিয়ে দেন মুমিনুল। একপাশ আগলে রাখা অধিনায়ক সিবান্দাকে ৩৭ রানে ফেরান জুবায়ের আহমেদ লিখন। তবে লড়াই করে চলেন ম্যালকম ওয়েলার। সিবান্দার সঙ্গে ৩৪ রানের জুটি ভাঙার পর ওয়েলিংটস মাসাকদজাকে নিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়েন এই ব্যাটসম্যান। ইলিয়াস সানির তৃতীয় শিকার হয়ে ১৫ রানেই সাজঘরে ফিরেন মাসাকাদজা। জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের হয়ে ৮টি টেস্ট ও ৪৫টি ওয়ানডে খেলা মেলকম ফিফটি তুলে নিলেও শেষ পর্যন্ত তার ইনিংসটি থামে ৭৭ বলে ৫২ রান করে। তাকে ফেরান মুমিনুল। তবে এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন লুকি আর কামুনগুজি। দলের হার নিয়ে লুকি ৩৫ ও কামাগুজি ব্যক্তিগত ১৭ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ওপেনিংয়ে ৫০ রানের জুটিতে শুরুটা ভালছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের। আগের ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো সৌম্য সরকার ২২ রান করে আউট হলে দলের রানের গতিতে ছন্দপতন ঘটে। এ সময় দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মার্শাল আইয়ুব। আগের দুই ওয়ানডেকে দলের জন্য তার অবদান ছিল মাত্র ৪ রান। কিন্তু গতকাল তার ব্যাটে রানের দেখা মেলে। প্রথমে ওপেনার লিটন দাসের সঙ্গে ২২, মুমিনুলের সঙ্গে ১৬, নাঈম ইসলামের সঙ্গে ২৮ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক। দলের রানের চাকা সচল রাখলেও অন্যপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন অব্যাহত থাকে। লিটন দাস ৪৬, মুমিনুল ৬, নাঈম ৯ রান করে আউট হন। এরপরই দলীয় ১৭০ রানের সময় অধিনায়ক ৭৮ বলে ৫৭ রান করে হাঁটেন সাজঘরের পথে। তার বিদায়ের পর ২৫ রান করা মোসাদ্দেকও ফিরে যান সাজঘরে। তবে এই অবস্থায় দলের হালে আবারও পানি পায় নুরুল হাসান সোহান ও ফরহাদ রেজার ৪০ রানের জুটিতে। ৪৬ ওভারে ২২৩ রানের সময় ১৯ রান করা সোহান রান আউট হলে আবারও ছন্দপতন ঘটে। শেষ দিকে ফরহাদ রেজার ব্যক্তিগত ৩২ রানে লড়িয়ে পুঁজি পায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ‘এ’ বনাম জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দল
টস: বাংলাদেশ (ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ‘এ’: ৫০ ওভারে ২৩৯ রান (মার্শাল আইয়ুব ৫৭, লিটন কুমার দাস ৪৬, ফরহাদ রেজা ৩২, মুজারাবানি ৪/৩৩)।
জিম্বাবুয়ে ‘এ’: ৫০ ওভারে ২৩১ রান (মেলকম ৫২, ভুসিমুজি সিবান্দা ৩৭, লুকি ৩৫*, ইলিয়াস সনি ৩/৫৩, মুমিনুল ৩/৩৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৩১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মার্শাল আইয়ুব