হংকংকে হারিয়ে এশিয়ান গেমসে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২৭ রানের জয়ে ব্রোঞ্জও নিশ্চিত করেছে মাশরাফি বাহিনী। এরপরও তৃপ্তি নেই ক্রিকেটারদের। বেশ কিছুদিন ধরেই ক্রিকেটে বাংলাদেশের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট ওয়ানডে সিরিজ বাজেভাবে হেরে বছর শুরু করেন ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের সঙ্গে নাকানি চুবোনি খেয়ে তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এশিয়া কাপেও। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে হংকংয়ের মতো দলের কাছে হেরেছে সাকিব-মুশফিকরা। দেশের মাটিতে গোহারা হেরেছে তৃতীয় সারির ভারতীয় দলের কাছেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটাও খুব বাজে কেটেছে মুশফিক বাহিনীর। এসব ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতেই এশিয়ান গেমসে পূর্ণশক্তির দল পাঠায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তাদের লক্ষ্য ছিল এশিয়ান গেমসে সোনা ধরে রাখার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। গেমস শুরুর আগে এমন কথা শোনা গিয়েছিল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কণ্ঠেও। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে এশিয়ান গেমসের মাধ্যমে জয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। বোলার, ব্যাটসম্যান পরীক্ষাটাও সারতে চেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে। কিন্তু এতে বাদ সাধলো বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে অদ্ভুত এক নিয়মের বেড়াজালে ফাইনাল খেলতে পারলো না বাংলাদেশ। এতে সোনা জেতাও হলো না; হলো না ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া।
এদিকে ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ৪ রানে হেরে গুয়াংজুর মতো ইনচনেও রৌপ্যপদক জিতেছে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল।
এশিয়ান গেমসে কখনই গুরুত্ব দেয় না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। গুয়াংজুতে পাকিস্তান দল পাঠালেও এবার পাঠায়নি। শ্রীলঙ্কাও মাঝারি মানের দল পাঠিয়েছে। পাসপোর্ট জটিলতায় গতবারের রৌপ্যজয়ী আফগানিস্তান, হংকংও পূর্ণশক্তির দল নিয়ে আসতে পারেনি। সেখানে মুশফিকুর রহীমকে ছাড়া সবাই ছিল বাংলাদেশ দলে।
ইনচনে মাশরাফি-সাকিবরা মাত্র দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। যার মধ্যে হংকংয়ের ম্যাচটি ক্রিকেট ম্যাচ বলে চালিয়ে দেয়া গেলেও কুয়েতের ম্যাচটি কোনভাবেই ক্রিকেট বলা যাবে না। ওই ম্যাচটি ছিল পুরোপুরি বিনোদন। ম্যাচ শেষে তারই প্রমাণ দিয়েছে ‘বাবা-বেটা’র কুয়েত। কুয়েতের ক্রিকেটাররা খেলার চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছবি তোলা ও অটোগ্রাফ নেয়াতেই বেশি ব্যস্ত ছিল।
এমন সব দলের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তির দল পাঠানো ঠিক হয়নি বলেই মনে করেন অধিনায়ক মাশরাফি। তার মতে, এমন আসরে জাতীয় দল না পাঠালেও চলতো। মাশরাফির এমন যুক্তি মানতে পারছেন না নির্বাচক ফারুক আহাম্মেদ। ‘এমন বড় গেমসে অন্য ডিসিপ্লিনে আমাদের পদক পাওয়ার সম্ভাবনা কম। ক্রিকেটে যেহেতু সুযোগ রয়েছে, পূর্ণশক্তির দল পাঠিয়ে সে চেষ্টাই করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তাছাড়া জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে ক্রিকেটারদের ফর্মে ফেরানোর একটা লক্ষ্য ছিল এখানে’- বলেন তিনি। অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মনে করেন, এখানে আমাদের সোনা জেতাটা খুব দরকার ছিল। এতে সোনা ধরে রাখার পাশাপাশি হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতাম, যা কাজে লাগতো জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আসন্ন হোম সিরিজে। তারপরও যা অর্জন হয়েছে তাকে মিশ্র অভিজ্ঞতা বললেন তিনি। ‘ব্রোঞ্জ জিতে ভাল লাগলেও সোনা জিততে না পারার আফসোসটা থেকেই যাচ্ছে। তবে টসের ওপর তো কারও হাত নেই’- বলেন রিয়াদ।
হংকংয়ের মতো দলকে হারিয়ে ক্রিকেটারদের তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কারণও রয়েছে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হংকংয়ের কাছে ২ উইকেটে হেরেছিলো বাংলাদেশ। তাই ব্রোঞ্জ জয়ের ম্যাচটি বেশ গুরুত্ব সহকারেই নিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। আগের দিন টসে হেরে সোনা জয়ের মিশনের সমাপ্তি ঘটলেও এদিন ঠিকই টসে জিতেন মাশরাফি। ইয়নহুই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের স্লো উইকেটে আগে ব্যাট করে ১৬২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৪৬ রান। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ৩৫, তামিম ইকবাল ২২ ও সামসুর রহমান শুভ ২৬ রান করেন। ১৬৩ রান করার পরও বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন হংকংয়ের ওপেনার ইরফান আহাম্মেদ। মাশরাফির করা প্রথম ওভারেই দুই ছক্কায় ১৩ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ইলিয়াস সানির করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আবারও ছক্কা হাঁকান ইরফান। ওই ওভারে ওয়াকাস বারাকাতের উইকেট তুলে নিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন সানি। ১৮ বলে চার ছক্কায় ৩১ করা ইরফানকেও ফিরিয়েছেন এ স্পিনার। মাঝে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা মার্ক চাপম্যানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সাকিব। হংকংয়ের পতন হওয়া সাত উইকেটের মধ্যে সাকিব-সানি (২+৩) মিলে ফিরিয়েছেন পাঁচজনকে। একজন রানআউটের ফাঁদে পড়লেও অপরটি দখল করেছেন রুবেল হোসেন। এ নিয়েই আজ বাংলাদেশে ফিরছে ক্রিকেট দল।