এবার ঈদুল আযহায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রামের আড়তদাররা। এরমধ্যে গরুর চামড়া চার লাখ, ছাগল একলাখ ও মহিষ দশ হাজার। তবে চামড়ার মূল্য কম নির্ধারণ করায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।কুরবানির চামড়া বিক্রির টাকা গরীবের অধিকার। এবার চামড়ার কম মূল্য নির্ধারণ করায় এতিম-মিসকিনরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন এমন মন্তব্য করেছেন কুরবানিদাতারা।চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন,‘কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম থেকে গরু, মহিষ ও ছাগল মিলে প্রায় পাঁচ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সমিতির ১১২জন সদস্য ও আরো ৫০-৬০ জন ব্যবসায়ী এ চামড়া সংগ্রহ করবে। ইতিমধ্যে চামড়া সংগ্রহের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’এবার ট্যানারি ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনবেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।এছাড়া প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকায় সংগ্রহ করা হবে।চামড়া ব্যবসায়ীদের তিন সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হাইড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন এই মূল্য নির্ধারণ করেছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ টাকা কম।গত বছর সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৮৫-৯০ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে তা কেনা হয় ৭৫-৮০ টাকায় ।সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। বকরির চামড়া ৪০-৪৫ টাকা এবং মহিষের চামড়া ৪০-৪৫ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।তৃণমূল পর্যায়ে নির্ধারিত মূল্যের আরো ২০টাকা কমে চামড়া কেনা হবে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।কাঁচা চামড়ার আড়তদার মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন,‘ট্যানারি ব্যবসায়ীরা লবনযুক্ত চামড়া কিনবে প্রতি বর্গফুট ৬০-৬৫ টাকায়। আড়তদাররা কিনবে ৫০-৫৫টাকায়। কারণ চামড়ায় লবণ দেওয়া, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচের কারণে নির্ধারিত মূল্যের ১০টাকা কমে কেনা হবে। ফঁড়িয়া, বেপারি ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কুরবানি দাতাদের কাছ থেকে ৪০-৪৫ টাকায় চামড়া কিনবে। কারণ তাদেরও খরচ আছে।’মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কোনভাবে নির্ধারিত মূল্যের বেশি টাকা দিয়ে চামড়া না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন মুসলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, চামড়া ‘ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অতিরিক্ত টাকায় চামড়া কিনে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। পরে কেনা দামে বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের শিকার হয়।’চামড়ার মূল্য কম নির্ধারণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুরবানিদাতারা। তাদের দাবি, চামড়ার মূল্য কম নির্ধারণ করে গরীব লোকজনকে অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।এদিকে চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হলেও মাত্র একটি ট্যানারি এক লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করবে। অধিকাংশ চামড়া চলে যাবে ঢাকার হাজারিবাগ ট্যানারি ও পোস্তারপাড় আড়তে। চট্টগ্রামে চামড়া শিল্পের দুর্দিন চলছে বলে জানান ট্যানারি ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীরা জানান, পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামে ১৯টি ট্যানারি গড়ে উঠে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে গড়ে উঠে তিনটি। এসব ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। ২২টি ট্যানারির মধ্যে চট্টগ্রামে বর্তমানে চালু আছে মাত্র ২টি ট্যানারি। এর মধ্যে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বটতল এলাকায় মদিনা ট্যানারি এবং চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট এলাকায় টি কে গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রিফ লেদার লিমিটেড। মদিনা ট্যানারিও বন্ধ হওয়ার পথে। নানামুখী সংকটে পড়ে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ২০টি ট্যানারি । তবে এবার চামড়া সংগ্রহ করবে শুধুমাত্র রিফ লেদার লিমিটেড।রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন,‘যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা ঠিক থাকলে এক লাখ বা তার চেয়ে কিছু বেশি চামড়া কেনা হবে। এর চেয়ে বেশি দামে হলে চামড়া কেনা সম্ভব না।’মদিনা ট্যানারির মালিক আবু মোহাম্মদ শাহ বলেন,‘বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চামড়া কেনা বন্ধ রেখেছি। মেশিন সচল রাখার জন্য মাঝে মাঝে সামান্য চামড়া কেনা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিমানা ও মামলাসহ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।’কি ঝামেলা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘দূষণ রোধে ইটিপি না বসানোর কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানা করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া না হলে একার পক্ষেতো ইটিপি স্থাপন করা সম্ভব না। আদালতে দৌড়াদৌড়ির চেয়ে ব্যবসা বন্ধ রাখা ভাল।’