গ্যাসের দাম বাড়ালে তার পরিণাম ‘শুভ’ হবে না বলেও সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে।
শনিবার সকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে গৃহস্থালী গ্যাসের দাম অর্থাৎ সিঙ্গেল চুলার জন্য ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ডাবল চুলার জন্য ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হবে।
“আমরা স্পষ্টভাষায় সরকারকে বলে দিতে চাই, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে, জনগণের আবেগ ও সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের জায়গাকে অসদাচরণ ও অসম্মান করে নির্বিঘ্নে রাজত্ব করা যাবে না। এর পরিণাম ভালো হবে না।”
সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলায় পাঠানো হয়েছে, যাতে ৫ থেকে ১২২ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
ঈদের পরই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কাছে পাঠানো হবে এবং বিইআরসি গণশুনানির পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর জানিয়েছেন।
দুই চুলার গ্যাসের বিল মাসিক ৪৫০ টাকা থেকে ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক চুলার সংযোগে ৪০০ টাকা থেকে ১১২ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৫০ টাকার প্রস্তাব এসেছে। বাসাবাড়িতে মিটার সংযোগে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১ অগাস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় গ্যাসের মূল্য পুনর্নিধারণ করা হয়েছিল। তখন সিএনজি ও ইটভাটা ছাড়া সব ধরনের গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, “ ঈদের প্রাক্কালে দলের নেতা-কর্মীরা মিথ্যা মামলা ও হামলা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। সাবেক সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন অনুমোদন দিয়েছে। তিন দিন আগে দলের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীমের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। এখন উল্টো তার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
“এভাবে বিরোধী দলকে লৌহ কপাটে ঢুকিয়ে অবৈধ সরকারের এইসব পদক্ষেপ নিজেদেরকে নিষ্কণ্টক করার অপকৌশল মাত্র। তারা মনে করছে, এভাবে নির্যাতন চালিয়ে সন্ত্রাস, ডাকাতি, লুটপাটসহ নিজেদের সব কুকীর্তি ঢাকা পড়ে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “যেভাবে তিনি দেশে নির্যাতন চালাচ্ছেন, রক্তপাতের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তাতে টিক্কা খানের পরেই তার স্থান হতে পারে।”
ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে চুরি-ডাকাতি ও মহামারি বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন এখন রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা আদায় করছে। এতে এক ভয়ঙ্কার নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।”
বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, “মানুষের অবদমিত ক্রোধ এখন গগণবিদারি বিস্ফোরণের মতো ফেটে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী যতই কঠোরভাবে আন্দোলন দমানোর হুমকি দিন না কেন সত্য ও ন্যায়ের সৈনিকরা বহ্নিমান মৃত্যু আর নিজেদের ঢেলে দেয়া রক্তের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবে। আমরা পর্বতের মতো অবিচল, ধ্রুব নক্ষত্রের মতো আমাদের অর্জনে এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।”
সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।