২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় পাঁচ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। সামনে এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই স্বপ্নবান হতে হবে। আজ যা স্বপ্ন, ভবিষ্যতে সেটিই বাস্তবে রূপ নেয়।
আমরা এ-ও মনে করি, বিজিএমইএ তৈরি পোশাক রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব। একদা দুর্ভিক্ষপীড়িত চীন যদি অর্ধশতকের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অর্থনৈতিক পরাশক্তিকে পেছনে ফেলে এক নম্বরে যেতে পারে, বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন? সত্তরের দশকের শেষে হাঁটি হাঁটি পা পা শুরু করা তৈরি পোশাকশিল্প এখন দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি রপ্তানি আয়ের দাবিদার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত রপ্তানি করেছে ২৪৪৮ কোটি ডলারের পণ্য; ২০০৯-১০ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১২৪৯ কোটি ডলার, যা অর্ধেকের সামান্য বেশি। ২০২১ সাল হতে এখনো সাত বছর বাকি। এই সময়ের মধ্যে রপ্তানি দ্বিগুণ করা মোটেই কঠিন হবে না।
রপ্তানি বাড়াতে বিজিএমইএ আগামী ৭-৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তৈরি পোশাক শীর্ষ সম্মেলন বা অ্যাপারেল সামিটের আয়োজন করেছে, তাতে অন্যান্যের মধ্যে উত্তর আমেরিকার শীর্ষ ক্রেতাদের জোট অ্যাপারেল অ্যালায়েন্স যোগ দেবে এবং বাংলাদেশে ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা শীর্ষক প্রদর্শনী করবে। এসবের মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাগুলো যেমন শনাক্ত হবে, তেমনি সম্ভাবনা কাজে লাগানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ পাওয়া যাবে। রানা প্লাজা ধসের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের আয়োজন বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতেও সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
সর্বোপরি এই খাতে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই। এই শিল্পে তখনই সর্বোচ্চ উৎপাদন আশা করা যায়, যখন কর্মপরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা পাবেন।