প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি সংকটের সময় মানুষ ফেসবুকে তাঁর প্রিয়জন কে কোথায় আছেন বা কেমন আছেন, খোঁজখবর করেন। এ সময় দুর্গত এলাকার মানুষ বা প্রিয়জনের অপেক্ষায় থাকা উদ্বিগ্ন স্বজনদের মধ্যে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ পরিস্থিতিতে সহজে যোগাযোগের জন্য বিশেষ একটি প্রয়োজনীয় টুল বা সহজ যোগাযোগ পদ্ধতি এনেছে ফেসবুক।
ফেসবুকের পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নওমি গিলেট, পণ্য ব্যবস্থাপক শ্যারন জেং ও সফটওয়্যার প্রকৌশলী পিটার কোলেট গতকাল বুধবার ফেসবুক নিউজরুমে ‘সেফটি চেক’ নামের একটি ফিচারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
ফেসবুকের কর্মকর্তারা জানান, বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করার জন্য একটি সাহায্যকারী টুল তাঁরা সরবরাহ করতে চান। এ জন্য তাঁরা ‘সেফটি চেক’ নামে সহজ ও সাধারণ যোগাযোগের একটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা নিজের খবর পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যের খবর পেতেও সাহায্য করবে।
ফেসবুকের কর্মকর্তাদের মতে, সেফটি চেক টুলটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পরিবার-পরিজনদের কাছে নিরাপদে থাকার তথ্যটি জানিয়ে দিতে পারবে। অন্যান্য দুর্গত এলাকার তথ্য জানার পাশাপাশি বন্ধু নিরাপদে আছে কি না, তা-ও জানা যাবে। শুধু বন্ধুরা এই নিরাপদ থাকার স্ট্যাটাস ও শেয়ার করা কোনো কমেন্টস দেখতে পারবেন।
২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই সংকটের সময়ই মানুষ কীভাবে প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে পরস্পরের খোঁজখবর রাখে সে অভিজ্ঞতা হয়েছে।
ফেসবুক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ফেসবুকের জাপানি প্রকৌশলীরাই বিপদের সময় কাজে লাগে এ ধরনের টুল তৈরিতে প্রথম পদক্ষেপ নেয়। তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের জন্য ‘ডিজাস্টার মেসেজ বোর্ড’ তৈরি করে এবং পরের বছর পরীক্ষামূলকভাবে একটি টুল চালুর পর তাতে অভূতপূর্ব সাড়া দেখা যায়।
দুর্ভাগ্যবশত এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই দেখা যায়। প্রতিবারই ত্রাণ বিতরণী সংস্থা ও জরুরি সাহায্য দাতা সংস্থাগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবরাখবর জানতে ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এই অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লেগেছে। দুর্যোগের সময় মানুষের ফেসবুক ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ডিজাস্টার মেসেজ বোর্ডকে উন্নত করেছি। পরে এই প্রকল্পটিকে সেফটি চেক নামকরণ করা হয়েছে। শিগগিরই এই টুলটি বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, ফিচার ফোন কিংবা ডেস্কটপের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
এই টুলটি কীভাবে কাজ করবে?
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর সেই এলাকায় অবস্থানকালে এই টুলটি যদি সক্রিয় করা হয়, তবে একটি ফেসবুক নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিরাপদ আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে। ব্যবহারকারী কোন স্থানে রয়েছে, সেটা প্রোফাইলে দেওয়া তথ্য, লোকেশন ফিচার বা ইন্টারনেট ব্যবহারের স্থান অনুমান করে ফেসবুক নির্ধারণ করে দেবে। যদি ফেসবুকের অনুমান ঠিক না হয়, তবে দুর্গত এলাকার বাইরে থাকার বিষয়টিও চিহ্নিত করে দেওয়া যাবে। নিরাপদ থাকলে ‘আই অ্যাম সেফ’ নির্ধারণ করে দিলে তা একটি নোটিফিকেশন ও নিউজ ফিড স্টোরি হিসেবে দেখাবে। ফেসবুকের বন্ধুরাও নিরাপদ থাকার বিষয়টিও নির্ধারণ করতে পারবেন। দুর্গত এলাকায় থাকা বন্ধুরা যদি সেফটি চেক চালু করে নোটিফিকেশন ক্লিক করেন, তবে তাঁর বন্ধুরা সে তথ্য জানতে পারবেন।
ফেসবুকের কর্মকর্তারা বলেন, আপনি এমন কোনো অবস্থায় পড়ে যদি সেফটি চেক চালু করেন, তখন আপনার স্বজনেরা আপনি নিরাপদ আছেন এটুকু জেনেই স্বস্তিতে থাকবেন বলে আমরা আশা করি।
সুত্র: প্রথম আলো