বিটিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’তে টুনি চরিত্রে অভিনয় করা নায়ার সুলতানা লোপার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন তাঁর স্বামী আলী আমিন। মাদকাসক্ত আলী আমিনকে নিয়ে আতঙ্কে থাকতেন লোপা ও তাঁর স্বজনরা। লোপার মৃত্যুর পর তাঁর মা রাজিয়া সুলতানা এ অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘আমার মেয়েকে পিটিয়ে, মুখে বিষ ঢেলে হত্যার পর ঝুলিয়ে রখেছে আমিন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লোপার গলায় ও বাম হাতের কবজিতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্তের সময় বিষ প্রয়োগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
গত বৃহস্পতিবার গুলশানের বাসা থেকে পুলিশ লোপার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গুলশান থানায় জামাতাসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন লোপার মা। গুলশান থানায় হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বলছেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
লোপার দুই শিশু আনহা আমিন (৯) ও আজারী আমিন (৬) এখন নানির কাছেই আছে। স্বজনরা জানিয়েছেন, মা-হারা এ দুই শিশু সারাক্ষণই মায়ের জন্য কাঁদছে।
গুলশান থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার ১ নম্বর সেকশনের ১২৩ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাসার সি/৩ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে লোপার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ফ্যানের সঙ্গে গলায় কাপড় মোড়ানো অবস্থায় থাকলেও মৃতদেহের পা বিছানার ওপর ছিল। ঘটনার পরই স্বজনরা দাবি করেন, মাদকাসক্ত স্বামী আলী আমিন এ ঘটনার জন্য দায়ী। লোপা আত্মহত্যা করেননি, তাঁকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। ওই দিন গুলশান থানায় আলী আমিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রাজিয়া সুলতানা। পুলিশ আমিনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
লোপার মা রাজিয়া সুলতানা তাঁর অভিযোগে জানান, ২০০০ সালের অক্টোবরে বিয়ের পর থেকেই আমিন স্ত্রী লোপার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। নির্যাতনের প্রধান কারণ ছিল আমিনের মাদকাসক্তি। পরিবারের মান-সম্মানের কথা ভেবে লোপা স্বামীর সব নির্যাতন সহ্য করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাদীর সব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখছি। আগে নির্যাতনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে হয়তো ঘটনার দিন কী ঘটেছিল, তা জানা যেত। ময়নাতদন্তে লোপা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা জানা যাবে।’
লোপার স্বজনরা জানান, শ্বশুরের পরিবারের আশ্রয়েই ছিলেন আলী আমিন। তিনি লোপার বাবার মালিকানাধীন বেঙ্গল তোয়ালে ইন্ডাস্ট্রিজে চাকরি করতেন। গুলশানের যে ফ্ল্যাটে তাঁরা থাকতেন সেটিও লোপার নামে তাঁর বাবা কিনে দিয়েছেন। ঘটনার পর সে ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে।
এদিকে আলী আমিনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও শুক্রবার নাতিন আনহা আমিনকে নিয়ে আদালতে তাঁকে দেখতে যান লোপার মা রাজিয়া সুলতানা। পারিবারিক সূত্র জানায়, মা হারানো দুটি মেয়ের মানসিক অবস্থা চিন্তা করে লোপার স্বজনরা এখন উৎকণ্ঠায় আছেন। মায়ের মৃত্যুর পর বাবার হাজতবাসে শিশুরা ভেঙে পড়েছে। গ্রেপ্তারের পর আলী আমিন দাবি করেছেন, দাম্পত্য কলহের জের ধরে লোপা আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।