পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত ২৩ জন জঙ্গির সংশ্রবের কথা জানতে পেরেছেন। তাদের বেশ কয়েকজন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তাছাড়া এদেরও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসা বেশ কয়েকজন জেএমবি’র মাথা বলে পরিচিতদের। তদন্তকারীরা একটি মহিলা স্কোয়াডেরও সন্ধান পেয়েছেন। এই স্কোয়াডের মূল মাথা হলেন ইউসুফ শেখের স্ত্রী আয়েশা বিবি। আর এই স্কোয়াডের প্রশিক্ষক হিসেবে উঠে এসেছে বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজীর স্ত্রী রাজিয়া বিবি ও বিস্ফোরণে আহত আবদুল হাকিমের স্ত্রী আলিমা বিবি। এরা দু’জনেই এখন গোয়েন্দাদের হেফাজতে। এনআই সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজী বাংলাদেশের নাগরিক এবং সক্রিয় জেএমবি নেতা। নদীয়ায় এসে করিমপুরের মেয়ে রাজিয়াকে বিয়ে করে। শ্বশুরকে পিতা পরিচয় দিয়ে ভারতের পরিচয়পত্রও তৈরি করে। গ্রেনেড তৈরিতে সিদ্ধ হস্ত। তার নদীয়ায় বোরখা ঘর নামে একটি দোকানও ছিল। তবে বিস্ফোরণে নিহত আরেকজনের পরিচয় সোভান মণ্ডল ওরফে শোভান শেখ বলে জানা গেলেও তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসের জাল ছড়ানোর কাজে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন ইউসুফ শেখ। মঙ্গলকোটের বাসিন্দা। রাজিয়া ও আলিয়ার মাধ্যমে শাকিল গাজীর সঙ্গে পরিচয়। শিমুলিয়ার বিতর্কিত মাদরাসাটি তারই। আরও দু’টি মাদরাসা খোলা চেষ্টায় ছিল। বিস্ফোরণের পর থেকে স্ত্রীসহ লাপাত্তা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল হাকিম শাকিলের সক্রিয় সহযোগী ছিল। সে বীরভূমের দেউচা গ্রামের বাসিন্দা। বিস্ফোরক তৈরি ও পাচারে বড় ভূমিকা ছিল তার। বাংলাদেশে বিস্ফোরক পাচারে প্রধান ভূমিকা ছিল কওসর মোল্লার। বাংলাদেশের জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য। জঙ্গি হিসেবে উঠে আসা কাদের শেখের বোনকে বিয়ে করে। শিমুলিয়ার মাদরাসার জমি দিয়েছিল যে বোরহান শেখ, তার নামও রয়েছে গোয়েন্দাদের খাতায়। বিস্ফোরণের পর সে লাপাত্তা হয়ে যায়। মঙ্গল কোটের বাসিন্দা বোরহান শেখের সঙ্গে ইউসুফ শেখের পরিচয় হযেছিল উত্তর প্রদেশের এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। কওসরের সহযোগী কাদের শেখ বীরভূমের কীর্ণাহারের আনমড়া গ্রামের বাসিন্দা। শিমুলিয়া মাদরাসায় নিজের বোনদের পড়তে পাঠিয়েছিল। সেখানেই তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছিল অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে। জিহাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। নিয়েছে অস্ত্র প্রশিক্ষণও। বিস্ফোরণের পর চারদিন সেখানেই ছিল। পরে সে উধাও হয়ে যায়। বর্ধমানের বাবুরবাগের ডেরায় কওসরের সঙ্গে থাকতো শেখ হবিবুর। শিমুলিয়ার মাদরাসায় যাতায়াত ছিল। বোলপুরের মুলুক গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের কাছেই একটি জঙ্গি ডেরা তৈরি করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে জিহাদি জাল বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা ছিল হাসেম মোল্লার। গুল ও জুতোর ব্যবসায়ী হলেও জঙ্গি যোগাযোগ ছিল অনেকদিন ধরেই। সেই শাকিলকে বাড়ি ভাড়া খুঁজে দিয়েছিল। ইউসুফ-শাকিলদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে জানা গেছে জহিরুল শেখের নাম। করিমপুরের কাছে বাড়ি। তার বাড়ি থেকেই ৪১টি জিলেটিন স্টিক, পাসপোর্ট, আইকার্ড উদ্ধার করেছে গোয়েন্দরা। বাংলাদেশের জেএমবি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব ছিল শাকিলের বোরখা ঘর ব্যবসায়ী পার্টনার আবুল কাশেম ওরফে আবুল কালাম শেখের। মঙ্গলকোটের বাসিন্দা আবুল কাশেমের পরিবারের সঙ্গে তিন বছরের বেশি কোন সম্পর্ক ছিল না। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে যে ফোনটি করা হয়েছিল তা করা হয়েছিল বর্ধমানের বাদশাহী রোডের ভাড়া বাড়িতে রেজাউল শেখের কাছে। শাকিলদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কাদের শেখের ভাগ্নে মাসুম শেখকেও গোয়েন্দারা হন্যে হয়ে খুঁজছে। বর্ধমানের আউসগ্রামের বাসিন্দা। তার কাছেই নিজের মোটরবাইকটি রেখে গিয়েছিল কাদের শেখ। ইউসুফ শেখের ভাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাপী শেখকেও গোয়েন্দারা আটক করেছেন। ইউসুফের আরেক ভাই কেরলে কর্মরত নজরুল শেখকেও গোয়েন্দারা খুঁজছে। আউসগ্রামে যার বাড়িতে বিস্ফোরণের পর কাদের শেখ তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে দু’দিন লুকিয়ে ছিল সেই লাল্টু মণ্ডলকে গোয়েন্দারা খুঁজছে। বীরভুমের কাদের শেখের তিন বোনকেই শিমুলিয়ার মাদরাসায় পাঠানো হয়েছিল ধর্মশিক্ষার নামে জেহাদি প্রশিক্ষণের জন্য। এরা হলো- জিন্নাতুর, জারিনা ও রুম্পা খাতুন। তিনজনের দু’জনই জঙ্গিকে বিয়ে করে। জিন্নাতুরকে বিয়ে করে কওসর, জারিনা বিবিকে বিয়ে করে হবিবুর। আর রুম্পা খাতুনের কোন খোঁজ নেই তার পরিবারের কাছে। তবে কাদের মা শরিফা বিবিকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন গোয়েন্দারা। সেই পলাতক। কাদের স্ত্রী খালিদা বিবি শিমুলিয়ায় পড়তে এসেই কাদেরকে বিয়ে করে। সে-ও জিহাদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তবে মহিলাদের নিয়ে যেভাবে আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছিল তাতে উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা। তাই এই মডিউলের সদস্যদের ধরার ব্যাপারে গোয়েন্দারা বেশি নজর দিয়েছে বলে জানা গেছে।