অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলার ঘটনায় ২৩ জনকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা সবাই ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। আজ দুপুরে তাদের নাম প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাঁচ জনকে আজীবন, সাত জনকে দুই বছর, তিন জনকে এক বছর, দুই জনকে ছয় মাস, পাঁচজন ছাত্রকে তিন মাস বহিষ্কার ও জরিমানা করা হয়। এছাড়া একজন ছাত্রের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় তার সার্টিফিকেট স্থগিত ও অর্থদন্ড করা হয়।
এদিকে এক সঙ্গে ২৩ নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি’র নেতৃত্বে একটি অংশ ভিসির সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানান। এ সময় ভিসি তাদেরকে বলেন, তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো একক সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছয় মাসের আগে পূর্নবিবেচনা (রিভিও) করার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
সার্টিফিকেট স্থগিত ও সামায়িক সনদ পত্র প্রত্যাহার হওয়া সদ্য বিদায়ী ছাত্র হলেন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মাহমুদ (পদার্থ বিজ্ঞান)। এছাড়াও তাকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজীবন বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধরা হলেন, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কে. এম নুরুন নবী (বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক্স), মওলানা ভাসানী হল শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ বাড়ৈ (নৃবিজ্ঞান), মো: এখতে খাইরজ্জামান ওরফে সঞ্চয় (ইতিহাস), মো: ইসতেহাদ আহমেদ ওরফে বিজয় (রসায়ন) ও কিশোর দাস (পদার্থবিজ্ঞান)।
দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন, এম মইনুল হোসাইন ওরফে রাজন (নৃবিজ্ঞান), খন্দকার নাঈম উল ইসলাম ওরফে নঈম (মার্কেটিং), সাদ্দাম হোসেন (উদ্ভিদ বিজ্ঞান), মু. আদেল আল নোমান (মার্কেটিং), মোঃ তানভীর আহমেদ ওরফে সজিব (মার্কেটিং), রাজ প্রসাদ ওরফে রাজ (পরিবেশ বিজ্ঞান),কাজী আসাদুল্লাহ তোহা (পদার্থ বিজ্ঞান)।
এক বছরের জন্য বহিষ্কৃতরা হলেন, শিহাব খন্দকার ওরফে শিহাব (পদার্থ বিজ্ঞান), কাজী রায়হান হাবীব ওরফে হিমেল (মার্কেটিং), মো. নিশাত রহমান ওরফে রামিম (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং)।
ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত হলেন, শান্ত কুমার নাথ (পরিবেশ বিজ্ঞান), শাকিল উজ জামান ওরফে শাকিল (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং)।
তিন মাস বহিষ্কৃতরা হলেন, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু (দর্শন), অভিজিৎ কুমার সিংহ (মার্কেটিং), মোঃ এহসানুর রহমান ওরফে আবির (অর্থনীতি), পাভের রহমান ওরফে পাভেল (অর্থনীতি), মোঃ আব্দুল মোমিন ওরফে চঞ্চল (উদ্ভিদ বিজ্ঞান)।
এদের সবাইকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ সহ সর্বোচ্চ ৮২,৪৪৯ টাকা থেকে সর্বনি¤œ ২,৯৫৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র গত ১৯ আগস্ট মধ্যে রাতে মওলানা ভাসানী হল শাখার সভাপতি শাকিল গ্রুপের নেতাকর্মীদের উপর দেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ বাড়ৈ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এতে সভাপতি গ্রুপের ১০জন আহত হয়। এ সময় তাদের ১৭টি কক্ষ, ১টি ল্যাপটপ ও কয়েটি মোবাইল ভাংচুর করে। এ ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষক ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতারকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।