প্রতিটি আউটই দুঃখজনক। তারপরও রানআউটে দুঃখের সঙ্গে যোগ হয় আফসোসও। আর গতকাল মুমিনুল যেভাবে আউট হলেন তাতে যোগ হয় ক্ষোভও। দলের সঙ্গীন অবস্থায় থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান যদি আয়েশী ভঙ্গিতে রান আউটের শিকার হন তখন দুঃখের সঙ্গে রাগের মিশ্রণ অবাঞ্ছনীয় নয়। শুধু তাই নয়, আফসোসের মাত্রাটা আরও বেড়ে যায় অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসানের রান আউটে। মিডল অর্ডারে দুজন ব্যাটসম্যানের রান আউট যে কোন দলের জন্যই অনেক বড় ক্ষতি। আর বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন মাত্র ১১৪/৪। ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পর মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ দৃঢ়তার সঙ্গেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দলের ৯২ রানের সময় মুমিনুল রান আউট হয়ে যান। তিনি তার কাজটি ভালই করছিলেন। কিন্তু যেভাবে তিনি আউট হন তা নিয়ে সবার আফসোস। ক্লান্তি না অবহেলায় এটা হয়েছে বোঝা না গেলেও অমার্জনীয় পর্যায়েই পড়ে তার আউট হওয়ার ধরন।
এর আগে ৯ টেস্টের ১৭ ইনিংসে কখনও রানআউট হননি ২৪ বছরের এ ক্রিকেটার। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিফটি করার পর চাতারার করা ইনিংসের ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলটি কভারে পাঠিয়ে রান নেয়ার জন্য ছুটলেন মুমিনুল। মনে হচ্ছিল তিনি ঠিকই রান নিয়ে ফেলবেন। বলে চোখ রেখেই দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। মুহূর্তের ব্যাপার। সিকান্দার রাজা বল তুলে নিয়ে ছুড়লেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। ততক্ষণে পপিং ক্রিজেও পৌঁছে যান মুমিনুল। কিন্তু হায়! ব্যাট মাটিতে ছোঁয়াতে যেন ভুলে গেলেন। বল সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে। সমঃস্বরে আউটের আবেদন জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়দের। তৃতীয় আম্পায়ার বিলি বাউডেন টিভি রিপ্লে দেখে জানিয়ে দেন ‘আউট’। টেস্টে প্রথম হলেও ওয়ানডেতে ২১ ম্যাচে ২ বার রান আউট হয়েছেন তিনি।
মুমিনুল রান আউট হওয়ার পর আরেকটি রান আউট কল্পনাও করতে পারেনি বাংলাদেশের সমর্থকরা। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ইনিংস মেরামতে হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। ৪২তম ওভারেই নাইম্বুর পরপর দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে মুমিনুলকে হারানোর হতাশা উড়িয়ে দেন মাহমুদ। উল্লাসে ফেটে পড়ে দর্শকরা। ওই ওভারে রান ওঠে ১৭। অবশ্য এর পরে চাতারার করা ওভারে আসে চার রান। ৪৪তম ওভারে টেইলর পানিয়াঙ্গারাকে নিয়ে এলে কোন রান নিতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। ৪৫তম ওভারে ফের চাতারার হাতে বল। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন সাকিব। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে কোন রান নিতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ। পঞ্চম বলটি অফের ছিল। আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট চালিয়ে বল পাঠান মিড অফের দিকে। রানের জন্য ছুটলেন মাহমুদ। ফিল্ডার ছিলেন প্রস্তুত। দোটানায় ছিলেন সাকিব। তবুও থিতু হওয়া মাহমুদকে বাঁচাতে ছুটলেন তিনি। ব্যাপারটা বুঝে ফিল্ডার সিকান্দার রাজা বল কুড়িয়ে পাঠালেন বোলার প্রান্তেই। সাকিব জায়গায় পৌঁছার আগেই বোলার চাতারা শুয়ে পড়ে বলটি ছুড়ে দেন স্টাম্পে। রক্ষা হলো না সাকিবের। আগের দিন ৬ উইকেট নিয়ে বুকের পাটা যতটা স্ফীত হয়েছিল কাল ততটাই যেন চুপসে যায়। ৮ বল খেলে ৫ রান নিয়ে ফিরতে হয় সাজঘরে।
এরপর পড়ন্ত বেলায় শাহাদাত হোসেনও সাজঘরে ফেরেন রান আউট হয়ে। তার আউটটি আরও হতাশার। বল করছিলেন পানিয়াঙ্গারা। বল শাহাদাতের প্যাডে লেগে শর্ট লেগের দিকে যায়। ব্যাটসম্যান নির্বোধের মতো ক্রিজের বাইরের এসে থেমে যান। লাইনে পা বা ব্যাট রাখার মতো যথেষ্ট সময় থাকলেও শাহাদাত দেরি করে ফেলেন। তার আগেই বল কুড়িয়ে উইকেট ভেঙে দেন ক্রেইগ আরভিন। বাংলাদেশের ফিল্ডাররা যেভাবে ক্যাচ ফেলে প্রতিপক্ষকে সহযোগিতা করেছে সেভাবে ব্যাটসম্যানরাও যেন রানআউট হয়ে সহযোগিতা করেছে বোলারদের।
যেভাবে আউট ১০ ব্যাটসম্যান
৪.৫ তামিম ইকবাল: ৫ (১০ বল)
পানিয়াঙ্গারার বাউন্ডারে আউট তামিম। তার করা শর্ট বল পিচে পড়েই ওঠে যাচ্ছিল তামিম ইকবালের খুব কাছ দিয়ে। শর্ট খেলায় উদ্যত তামিম ইকবালের গ্লাভসে ছুঁয়ে ক্যাচ জমা পড়লো মাসাকাদজার হাতে।
১৪.৫ শামসুর রহমান: ৮ (৫০ বল)
পানিয়াঙ্গারার বলে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন শামসুর রহমান। পিচে পড়ে বাইরে যেতে থাকা বল একটু আগেই খেলে ফেলেছিলেন শামসুর। ক্যাচ চলে যায় চিগুম্বুরার হাতে।
৪০.৩ মুমিনুল হক: ৫৩ (১১২ বল)
চাতারার শর্ট লেন্থের বল কভারে ঠেলে দিয়েই রান নিতে দৌড়ান মুমিনুল। আর সিকান্দার রাজার থ্রো সরাসরি স্ট্যাম্পে আঘাত হানে।
৪৪.৫ সাকিব আল হাসান: ৫ (৮ বল)
চাতারার বলে ব্যাট চালালেন মাহমুদুল্লাহ। রান নিতে গিয়ে অন্য প্রান্তে রান আউট সাকিব আল হাসান। সাকিব ডাইভ দিয়েও বাঁচতে পারেননি।
৬৮.৩ মাহমুদুল্লাহ: ৬৩ (১৬০ বল)
সিকান্দার রাজার বলে মাহমুদুল্লাহ আউট। মাঠের আম্পায়ার আউট না দিলেও এলবিডব্লিউর জন্য রিভিউ চান ব্রেন্ডন টেলর। বাইরে পড়া বলটি ভেতরে ঢুকে মাহমুদুল্লাহর সামনের পায়ে লাগে। তার পা অফ স্ট্যাম্পের সামনেই ছিল। হক আই বলছিল বলটি লেগ স্ট্যাম্প ভাঙতো।
৭৭.৬ শুভাগত হোম : ১৪ (৩১ বল)
কামুনগোজির বলে শুভাগত হোম আউট। বাংলাদেশের বিলিয়ে দেয়া আরেকটি উইকেট। অফ স্ট্যাম্পের বলে ব্যাট চালিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে ফিরতে হয় তাকে।
৮৫.৬ মুশফিকুর রহিম : ৬৪ (১২৬ বল)
পানিয়াঙ্গারার বলে মুশফিকুর রহিম আউট। বাইরের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্রেইগ আরভিনের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক।
৯৩.২ তাইজুল ইসলাম : ১৯ (৪৬ বল)
পানিয়াঙ্গারার বলে তাইজুল আউট। শর্ট ডেলিভারি পুল করতে যান তাইজুল। কিন্তু বল প্রত্যাশামতো উপরে না ওঠায় তার স্ট্যাম্প ভেঙে যায়।
৯৭.৫ আল আমিন হোসেন : ৯ (২১ বল)
পানিয়াঙ্গারার বলে আল আমিন আউট। বাতাসে ভাসানো স্লো ডেলিভারি ছিল এটি। এতে ভেঙে যায় আল আমিনের স্ট্যাম্প।