বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এমন আনন্দের দিন সর্বশেষ কবে এসেছে? ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের ৩ উইকেটে জয়। ১৯ মাস পর একই দিনে বাংলাদেশ জয় দেখলো ফুটবলেও। সিলেট-যশোরে জয়বিমুখ বাংলাদেশ ফুটবল দল সাফল্যের নাগাল পেলো পদ্মার পাড়ের শহর রাজশাহীতে। গতকাল জাহিদ হাসান এমিলির একমাত্র গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারালো বাংলাদেশ। এতে দুই ম্যাচ সিরিজ এক শূন্যতে জিতে নিলো মামুনুল বাহিনী। আগের ম্যাচেও গোল করেছিলেন দেশ সেরা এই স্ট্রাইকার। এনিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৮ গোল করলেন এমিলি। আর গতকাল এমিলি উৎসবের উপলক্ষ এনে দিতে সময় নিলেন মাত্র দুই মিনিট। রাজশাহীতে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে পেনাল্টিতে গোল আদায় করেন এমিলি। চার বছর আগে কলম্বোতে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হেরেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। রাজশাহীতে সে পরাজয়ের দারুণ প্রতিশোধ তুললো মামুনুল ইসলামের দল। দুই দলের ১৪ সাক্ষাতে এ নিয়ে বাংলাদেশ জিতলো ৯ বার।
যশোরের মতো রাজশাহীতেও ফুটবলের প্রতি দর্শকের ভালোবাসার চিহ্নটা ছিল পরিষ্কার। গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তবে যশোর শামসুল হুদা স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে মানুষ যেভাবে মাঠের ভেতর ঢুকে পড়েছিলো, রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে তেমন ঘটেনি। একাদশে দুটি পরিবর্তন নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ দলকে ম্যাচের আগাগোড়া দেখা গেছে ভিন্নরূপে। পাস, স্কিল, মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণ সবকিছুতেই শ্রীলঙ্কা থেকে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে দুটি ম্যাচের একটিতেও শ্রীলঙ্কাকে হারাতে না পারলে বাংলাদেশ দলের সামর্থ্যই যে হবে প্রশ্নবিদ্ধ। দুর্বল শ্রীলঙ্কাকে হারাতে না পারলে প্রশ্ন উঠবে স্থানীয় কোচ সাইফুল বারী টিটুর সামর্থ্য নিয়েও। মাসখানেক আগে এশিয়ান গেমসে দারুণ খেলে এসেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। এবারের দলে রয়েছেন সিনিয়ররাও। তবে গতকাল কোচ টিটুর কৌশল কাজে দেয় দারুণ। জামাল ভূঁইয়া ও সোহেল রানার অন্তর্ভুক্তিতে শুরু থেকেই দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। কিক অফের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গোল পেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু সে যাত্রায় বাংলাদেশকে হতাশ করেন লঙ্কান ডিফেন্ডার কুমারা। তবে পরের মিনিটেই গোলের দেখা পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। স্পট কিক থেকে গোল করেন এমিলি। সফরকারী দলের মিডফিল্ডার রোশান ড়নিজেদের বক্সে রাফ ট্যাকল করেন মামুনুলকে। রেফারি মিজানুর পেনাল্টির বাঁশি বাজান। এমিলির স্পট কিক জালে প্রবেশ করতেই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন হাজার তিরিশেক দর্শক। ২৭ মিনিটে স্বাগতিকদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল সফরকারী শ্রীলঙ্কা। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক সানজিবা। তার পেছনে ছিলেন না স্বাগতিক শিবিরের কোন ডিফেন্ডার। বক্সের বাইরে এসে গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ দলকে বিপদমুক্ত করেন সানজিবাকে রাফ ট্যাকল করে। রেফারি মিজানুর রহমান রাসেলকে হলুদ কার্ড দেখান। মিজানুর রহমানের নেয়া এই সিদ্ধান্ত ভালো ভাবে নেননি শ্রীলঙ্কান কোচ নিকোলো কাভাজোভিক। ম্যাচ শেষে এনিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এই সার্বিয়ান। অসাধারণ খেলেছেন জাহিদ হাসান। যদিও গতকালের ম্যাচেও তাকে পুরো সময় মাঠে রাখেননি কোচ সাইফুল বারী টিটু। যতটুকু মাঠে ছিলেন আক্রমণের ভিদ রচনা করেছেন। ৫২ মিনিটে মিঠুন চৌধুরীর কর্ণার কিক থেকে জাহিদ হোসেন লং বলে এমিলি হেড নিলেও অল্পের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৬৫ মিনিটে আবারও জাহিদের মাইনাস কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি স্বাগতিকরা। শেষদিকে মোনায়েম খান রাজুর জায়গায় হেমন্ত ভিনস্টে বিশ্বাস মাঠে নামলে আক্রমণের তীব্রতা বাড়ে বাংলাদেশের। জাহিদ-হেমন্তের ওয়ান টু ওয়ানে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মিঠুন। ৩৮ মিনিটে মামুনুলের বদলি হিসেবে মাঠে নামা মিঠুনকে পরে উঠিয়ে নেন কোচ টিটু। পরিবর্তন আনেন আরও পাঁচটি। ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হলেও পেশাদারিত্বে একটু ছাড় দিতে চাননি বাংলাদেশী এই কোচ।