দেশে এইডস রোগীদের সরকারিভাবে ওষুধ বিতরণের ঘোষণায় সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে এ রোগে আক্রান্তদের নিয়ে গঠিত সংগঠনগুলোর মঞ্চ নেটওয়ার্ক অব পিএলএইচআইভি। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিএলএইচআইভি এ উদ্বেগের কথা জানায়।
বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে এইডস রোগ বিষয়ক কর্মসূচি এনএএসপির মাধ্যমে সরকার কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এইডস রোগের ওষুধ বিতরণ করে আসছে। তবে দুই বছর আগে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী জানুয়ারি মাস থেকে পাঁচটি সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে ওষুধ ও অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে। সরকারি হিসাবে এই মুহূর্তে দেশে তিন হাজার ২৪১ জন এইডস রোগী আছে।
সংবাদ সম্মেলনে নেটওয়ার্ক অব পিএলএইচআইভির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ইউএসএআইডিসহ সব আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। সুইস রেডক্রস খুব স্বল্পমাত্রায় সেবা দিচ্ছে। এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া রোগের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক তহবিল জিএফএটিএম আগামী ডিসেম্বরে সব কাজ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু কোন পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল কীভাবে ওষুধ সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে সরকার সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলছে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কমপক্ষে তিনজন রোগী বলেন, তাঁরা নিজেদের রোগের কথা প্রকাশ করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাননি। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও, তাঁরা তা পাচ্ছেন না। সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নিলেও, তা কতটা সফল হবে এ নিয়ে তাঁরা সন্দিহান।
একজন রোগী বলেন, তিনি তাঁর স্বামীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তাঁর এইডস আছে জানার পর চিকিৎসকেরা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে একপর্যায়ে তাঁর স্বামী মারা যান।
একাধিক রোগী বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা একটি নির্দিষ্ট দিনে বেসরকারি সংস্থা থেকে ওষুধ নিয়ে যায়। রাত ১০টা পর্যন্ত তারা ওষুধ সংগ্রহ করতে পারে। বেলা আড়াইটার পর সরকারি হাসপাতালে ওষুধ দেওয়ার জন্য কেউ থাকবে কি না, তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।
নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধের মাত্রা ঠিক করা হয়। পাঁচ বছর আগে সরকার পরীক্ষার জন্য নতুন আটটি যন্ত্র কিনলেও সেগুলো এখনো কাজে লাগানো হয়নি।
অপর এক নেত্রী বলেন, শুধু ওষুধ দিয়েই এইডস রোগীদের চিকিৎসা হয় না। তাদের জীবনাচরণ সম্পর্কে দীর্ঘ সময় পরামর্শ দিতে হয়। সব বিষয়ই বিবেচনা করা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনএএসপির পরিচালক হোসাইন সারওয়ার খান বলেন, এইডস রোগীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। সরকারিভাবে ওষুধ বিতরণের প্রস্তুতি চলছে।