অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতের গবেষণা কাজে সহায়তার জন্য সরকার জাতীয়ভাবে গবেষণা তহবিল গঠন করবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মস্তফা কামাল। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে আয়োজিত ‘চ্যালেঞ্জ ফেসিং ইকোনমিক রিসার্চ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা জানান তিনি। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সীমাবদ্ধতা একদিনে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। আমরা পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছি। আমাদের গবেষণা তথ্য সত্য কিনা, সেই বিশ্বাস আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। তিনি বলেন, ৭০ দশকে আমাদের স্কুল-কলেজের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। ১৭ শতাংশ মানুষও স্কুলে যেত না। বর্তমানে শতভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। ৭০ দশকে আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। এখন তা কমে ২৫ শতাংশে চলে এসেছে। মন্ত্রী আরও বলেন, যারা হতদরিদ্র ছিল তারা দারিদ্র্যসীমায় উঠে এসেছে। দরিদ্ররা মধ্য আয়ে উঠে এসেছে। তবে শিক্ষার মান নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। আমাদের শিক্ষার মান যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে যাচ্ছে না। মুস্তফা কামাল বলেন, আমি সব গবেষণা তথ্য অবিশ্বাস করি না। তবে গবেষণা তথ্য সব সঠিক হলে আমরা অনেক দূর এগুতে পারতাম। বর্তমানে সরকার গবেষণা খাতে জিডিপি’র (মোট দেশজ উৎপাদন) দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ করছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে ৮ শতাংশের মধ্যে। আমরা আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগ এক শতাংশে নিয়ে আসবো। গবেষণার জন্য শিগগিরই সরকার জাতীয় গবেষণা তহবিল গঠন করবে। মন্ত্রী আরও বলেন, দেশ উন্নত হচ্ছে, কিন্তু সরকার স্বাবলম্বী হতে পারছে না। বিভিন্ন খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কৃষি খাতেই প্রতিবছর সরকারকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমাদের জিডিপি’র আকারের তুলনায় জিডিপি’র আয় অনেক কম। এটাকে বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সক্ষমতার জায়গাগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। এখন আমাদের এগুতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে এ শিক্ষা বর্তমান প্রচলিত শিক্ষা না। আমাদের সমাজ বিনির্মাণের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। মূল প্রবন্ধে নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের গবেষণা কাজে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব গবেষণা করছে তার মান ও গবেষণা নীতি গ্রহণযোগ্য না। গবেষণা কাজে পর্যাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। নির্দিষ্ট কিছু অর্থনীতিবিদদের মাধ্যমে গবেষণা করা হচ্ছে। তারা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে গবেষণা করছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া উচিত। আমাদের অনুধাবন করতে হবে এটি কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যু। নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা, লিঙ্গ বৈষ্যম হ্রাসে আমাদের অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু দুর্বলতা রয়েছে। থাইল্যান্ডের মতো দেশে অষ্টম শ্রেণীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষক ক্লাস নেন।
কিন্তু আমাদের দেশে কি এটা সম্ভব? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা গবেষণা করেন তাদের পর্যাপ্ত বেতন দেয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক একজন শিক্ষক তিনটি-চারটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।