অধিনায়কত্ব পেয়েছেন এর আগেও। কিন্তু চোটাঘাত সেটি ধরে রাখতে দেয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য আবারও অধিনায়কত্ব পেয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার নিশ্চিতই মনে পড়েছে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। তবে সব ভুলে আপাতত তিনি পাখির চোখ করছেন ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটাকেই। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক মাহমুদ
৩-০-তে টেস্ট সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল। মাঠের বাইরে থেকে দলটাকে কেমন মনে হয়েছে?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: বাইরে থেকে দেখে তো খুব ভালোই মনে হয়েছে। সাকিব প্রথম দুই ম্যাচে অনেক পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। মুশফিকও টেস্ট জিতিয়ে এনেছে। রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ), তামিম ফর্মে ফিরেছে। মুমিনুল শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করল। সবার এ রকম ফর্মে ফেরার খুব দরকার ছিল। ২০১৪ সালটা আমাদের জন্য যে রকম গেছে, আমি বলব খুব ভালো সময়ে সবাই ফর্মে এসেছে। এখন এটা ধরে রাখা জরুরি।
টানা তিন টেস্টজয়ী একটা দল পাচ্ছেন ওয়ানডে সিরিজে। দলটা জয়ের মধ্যে থাকায় ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে কি আপনার কাজটা সহজ হয়ে গেল?
মাশরাফি: অবশ্যই। যারা টেস্টে খেলেছে তাদের জন্য তো অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। জিম্বাবুয়ের বোলার-ব্যাটসম্যানদের দেখা হয়ে গেছে তাদের। তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। আর আমরা যারা দলে এসেছি, তারাও দেখেছি জিম্বাবুয়ের কার কী দুর্বলতা। এসব নিয়ে হয়তো আরও আলোচনা হবে। সবচেয়ে বড় কথা জেতার মধ্যে থাকলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেশি থাকে।
ওয়ানডে সিরিজ বেশ লম্বা, ৫ ম্যাচের। প্রতিটি ম্যাচেই ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
মাশরাফি: ৫-০-তে সিরিজ জিততে চাই, তা এখনই বলছি না। সেটা অনেক দূরের কথা। আমরা প্রতিটি ম্যাচের প্রতি আলাদাভাবে ফোকাস করতে চাই। আগে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে হবে, এরপর অন্য কিছু। এ মুহূর্তে প্রথম ম্যাচটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়ানডেতে এই জিম্বাবুয়ে কেমন প্রতিপক্ষ হতে পারে?
মাশরাফি: ওয়ানডেতে ওরা অনেক ভালো দল। সিবান্দা আসবে, রাজা-মাসাকাদজা ফর্মে আছে, টেলর রান করেনি…সেও এবার কিছু করতে চাইবে। তা ছাড়া ওয়ানডেতে চাইলেও ও রকম আক্রমণাত্মক বোলিং-ফিল্ডিং করা যায় না। সবকিছু নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর। আর যেহেতু দিবারাত্রির ম্যাচ, ওয়ানডে সিরিজে সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে শিশির। পরে বোলিং করলে স্পিনাররা সমস্যায় পড়বে।
টেস্টে তো স্পিনাররা ভালোই সাহায্য পেয়েছে উইকেট থেকে। ওয়ানডেতে কী ধরনের উইকেট আশা করছেন?
মাশরাফি: আমাদের শক্তিমত্তা আর ওদের দুর্বলতা হিসাব করলে অবশ্যই স্পিনিং উইকেট আশা করব। কিন্তু সমস্যা একটাই—বিশেষ করে শীতের এই মৌসুমে দিবারাত্রির ম্যাচে আপনার প্রত্যাশামতো উইকেট হবে না। শিশিরে ভিজে যাওয়ার কারণে স্পিনাররা বল ঠিকভাবে ধরতে পারবে না। টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করতে পারলে অবশ্য উইকেটের সাহায্য নেওয়া সম্ভব। কিন্তু টসটা তো আর আমার নিয়ন্ত্রণে না। আমরা অবশ্যই চাই স্পিনসহায়ক উইকেট হোক। আবার পরে বল করলে স্পিনারদের চেয়ে বরং পেস বোলারদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের দেশে চাইলেও গতিময় উইকেট হয় না। হয়তো স্পিন উইকেটই হবে। এখন তা আমাদের পক্ষে কতটুকু থাকে সেটাই কথা।
অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গে আসি। আপনার মধ্যে আবারও অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রত্যাশা কি ছিল?
মাশরাফি: গত কয়েক বছর আমার একটাই চিন্তা ছিল—বাংলাদেশের হয়ে যত বেশি দিন খেলা যায়। অধিনায়কত্ব নিয়ে আসলে কখনোই অত চিন্তা ছিল না। আগে যখন অধিনায়কত্ব পেয়েছিলাম তখনো না, এখন তো না-ই। আর ২০১৪ সালটা যেভাবে যাচ্ছিল, এসব নিয়ে ভাবারই সুযোগ ছিল না। কীভাবে দল ভালো খেলবে সেটা নিয়েই সবাই চিন্তাভাবনা করেছে। তবে দায়িত্ব যখন পেয়েছি, সেটা ভালোভাবে পালন করতে চাই।
দায়িত্ব পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে কী মনে হয়েছিল?
মাশরাফি: ওই সময় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫টি ওয়ানডেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। নিজের কেমন লাগছে সেটা নিয়ে আর ভাবিইনি। সরাসরি ৫টা ওয়ানডে নিয়ে ভেবেছি। এ ম্যাচগুলোয় ভালো করতে হলে কী করতে হবে, ওসব চিন্তাই মাথায় ঘুরেছে। বাংলাদেশ দলে খেলি, এটাই আমার গর্ব। অধিনায়কত্ব নিয়ে আলাদা গর্ব নেই।
শোনা যাচ্ছে, বিসিবি আপনাকে ২০১৫ বিশ্বকাপের অধিনায়ক হিসেবেও চিন্তা করছে…
মাশরাফি: আমার সামনে তিনটি ওয়ানডে থাকলেও হয়তো ওসব নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ৫ ম্যাচের ওয়ানডের সিরিজ অনেক বড়। শারীরিক-মানসিকভাবে অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সুস্থ থাকা, খেলা, ভালো খেলা, দলকে জেতানো—আমি আসলে এখন এসব নিয়েই ভাবছি। আর ৫টা ওয়ানডে হয়ে যাওয়ার পর সব হিসাব এমনিতেই সামনে আসবে। আমি নিজে তখন আরেকটু ভাবতে পারব, বিসিবিও ভাবতে পারবে।
অধিনায়কত্ব পেয়েও এর আগে চোটে পড়ে তা হারিয়েছেন। এবার কি চোটের কথাটা মাথায় আসছে?
মাশরাফি: হ্যাঁ, এটা একটা ভয়ের কারণ তো বটেই। চোটে যে অধিনায়কত্ব পেলেই পড়ব, তা না। তবে কেউ আমাকে মারলে যে ভয় পাই, তার চেয়ে কথাকে ভয় পাই বেশি। এখন এ ধরনের কথা যেহেতু আছে, আর অধিনায়কত্ব পেলে সেটা বারবার আমার বিপক্ষেও যায়…এটা নিয়ে ভয় তো থাকেই। তবে আমার বিশ্বাস, যেভাবে সব ঠিক রাখার চেষ্টা করছি, ইনশা আল্লাহ সমস্যা হবে না।
চোট কাটিয়ে ওঠার পর নির্বাচকেরা এ রকমও চিন্তা করেছিলেন যে আপনাকে টানা না খেলিয়ে বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে খেলাবেন। অধিনায়ক হলে কি আসলে সেটা সম্ভব?
মাশরাফি: যদি সিরিজ জিততে পারি, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমার ডেপুটি সাকিবও কিন্তু আছে। ওর সামর্থ্য আমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমার কোনো সমস্যা যদি হয়ই, মনে হয় না বিশ্রাম নিতে অসুবিধা হবে। এখন দলে সহ-অধিনায়ক আছে যার সামর্থ্যও অনেক।
টানা ৫টি ওয়ানডে খেলার মতো ফিটনেস কি আছে আপনার?
মাশরাফি: ইনশা আল্লাহ আছে। যেহেতু টেস্ট খেলছি না, নতুন করে চোট না পেলে সমস্যা হবে না আশা করি। লম্বা সময় ধরে যাতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সার্ভিস দিতে পারি, সে জন্যই এখন টেস্ট খেলছি না। নইলে ফিটনেসে আমার কোনো সমস্যা নেই। সর্বশেষ ফিটনেস টেস্টও আমার খুব ভালো হয়েছে।
ওয়ানডেতে আপনার অধীনে খেলবেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সাবেক অধিনায়ক সাকিবও দলে আছেন। তামিম ইকবাল টেস্টের সহ-অধিনায়ক। এই যে নেতৃত্বে থাকার মতো এত খেলোয়াড় দলে, তাঁদের সঙ্গে আপনার সমন্বয় কেমন হবে?
মাশরাফি: মুশফিকের সঙ্গে তো আজ (গতকাল) সকালেও আড্ডা দিলাম। তামিমও এসেছিল। আমরা ও রকম দলও না, ও রকম ছেলেও না যে এসব নিয়ে সমস্যা হবে। খারাপ লাগা-ভালো লাগা থাকলে সেটা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করি। এই তিনজনের দুজনই বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তামিমও এক দিন দেবে ইনশা আল্লাহ। আর এই তিনজন দলকে সব সময়ই সাহায্য করে। ব্যাটে-বলে বা মাঠের বাইরেও। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে ওদের আমার কিছু বলাই লাগবে না। ওরা নিজ থেকেই আমাকে সাহায্য করবে, এটুকু বিশ্বাস আছে।