কামরুল ইসলাম হৃদয়, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান: লোকবলের অভাবে ধুঁকছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চল। গত কয়েক দশকে নগরীর লোকসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সংখ্যা বাড়লেও সে হিসেবে বাড়েনি নগরীর মাদক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার লোকবলের সংখ্যা।
নগরীর উত্তর-দক্ষিণ জোনের ১৬ থানায় তত্ত্বাবধায়কের দুটি পদ থাকলেও সে পদের দায়িত্ব পালন করছেন একজন তত্বাবধায়ক।
তবে নগরীতে বসবাসরত প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের বিপরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম উপ অঞ্চলের এই উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে রয়েছেন মাত্র পাঁচজন পরিদর্শক, একজন উপ-পরিদর্শক, আটজন সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং সাতজন সিপাহী (কনেস্টেবল পদমর্যাদার)।
গত তিনমাসে মেট্রো উপ-অঞ্চলের ১০২টি মাদকের মামলা হলেও নিয়মিত মামলা হয়েছে মাত্র ২২টি। বাকি ৮০টি মামলা ছিল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম উপ-অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্যে লোকবলের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী- চট্টগ্রাম মহানগরীকে উত্তর-দক্ষিণ দুইভাগে (জোনে) বিভক্ত করে মাদক নিয়ন্ত্রণেমাদকদ্রব্য অধিদপ্তর কাজ করলেও চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জোনের জন্য আলাদা লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। উত্তর ও দক্ষিণ জোনে আলাদাভাবে দুইজন তত্ত্বাবধায়ক থাকার কথা থাকলেও এই পদে গত ৪ মাস ধরে রয়েছেন মাত্র একজন।
পদোন্নতির কারণে চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের দক্ষিণ জোনের তত্ত্বাবধায়ক আনিসুর রহমান চট্টগ্রাম থেকে বদলি হলেও দীর্ঘ ৪ মাসেও সে পদে নতুন কাউকে দেয়া হয়নি।
জনবল সঙ্কটের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক আলি আসলাম হোসাইন বলেন, শূন্যপদ পূরণসহ লোকবল বাড়ানোর জন্য একটি প্রস্তাবনা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি- খুব তাড়াতাড়ি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
লোকবল কম থাকার কারণে নগরীর মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে তিনি বলেন, নগরীর অপরাধীদের সংখ্যার তুলনায় আমাদের কর্মকর্তা অনেক কম। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলে নিয়মিত মামলাসহ অভাবনীয় মাদক উদ্ধার হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর নগরীর কেপিজেড এলাকা থেকে ৫১২৭ বোতল বিদেশী মদসহ ৩৮ হাজার ১৭৭ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকারও বেশি।
তবে চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক (উত্তর) চৌধুরী ইমরুল হোসেন বলেন, লোকবল কম থাকার পরও আমাদের উপঅঞ্চলের সাফলতা অনেক বেশি। চট্টগ্রাম মেট্রো উপ অঞ্চলে চলতি বছরের গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) ১০২টি মামলা হয়েছে। তিনি জানান, গত বছরের একই সময়ে মামলা হয়েছিলো মাত্র ৫৭টি।
নগরীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলে চলতি বছরের আগস্ট মাসে মামলা হয়েছে ২৫টি। এই মামলায় ৩২জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক আইনে তাৎক্ষণিকভাবে সাজা প্রদান করেছেন ১৬ জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা ছিলো ১৬ টি।
সেপ্টেম্বরে মামলা হয়েছে ৪০টি। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৮ জনকে। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক সাজা হয়েছে ৩১ জনের। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা ছিলো ৩১টি।
অক্টোবরে মামলা হয়েছে ৩৭টি। আসামি করা হয়েছে ৪৬জনকে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হয়েছে ৩৩ জনের। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা ছিলো ৩৩টি।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্দ্রন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়।