ভোজনরসিকদের জন্য চট্টগ্রামের চেয়ে ভালো জায়গা বুঝি আর হয় না। শহরজুড়ে কত যে রেস্তোরাঁ, আর সেসব রেস্তোরাঁয় কত না ভিন্ন স্বাদের খাবার! অন্য এলাকা বাদ দিন, জিইসি মোড়ের টিম হোটেল পেনিনসুলা থেকে হাঁটা দূরত্বেই আছে অন্তত ৮-১০টা ভালো মানের খাবার হোটেল। খেলোয়াড়দের জন্য এটা একটা বাড়তি সুবিধা। চাইলে রুচি বদলানো যায় প্রতি বেলাতেই।
কাল ছুটির দিনের দুপুরে বাংলাদেশ দলের কয়েকজন খেলোয়াড়কে যেমন দুই ভাগে পাওয়া গেল দুটি রেস্তোরাঁয়। সাব্বির রহমানের জন্মদিন ছিল। সন্ধ্যায় টিম হোটেলে কেক কাটা হয়েছে। তার আগে দুপুরে সাব্বিরসহ সাত ক্রিকেটার দুপুরে একসঙ্গে খেলেন একটা রেস্তোরাঁয়। সাব্বির জন্মদিনের কেক কেটেছেন সেখানেও। কাছেরই আরেক রেস্তোরাঁয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পাওয়া গেল দুই পেসার শফিউল ইসলাম আর আল আমিনের সঙ্গে।
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির একটা বড় গুণ হলো সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশতে পারা। পরিস্থিতি বিবেচনায় মাশরাফি এই গুণটাকে নানাভাবে কাজে লাগান। কখন কার সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যেতে হবে, কখন কাকে দূর থেকেই বলতে হবে ‘এগিয়ে যাও…’, বাংলাদেশ দলে এসব তাঁর চেয়ে ভালো বোঝে না কেউ। প্রখর নেতৃত্বগুণের কারণেই বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়টির নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। সবার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যও তিনি। কাল যে দুই পেসারকে নিয়ে আলাদাভাবে মধ্যাহ্নভোজে গেলেন, অন্তর্নিহিত কোনো তাৎপর্য থাকতে পারে সেটারও।
পরশু ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বারবার বলছিলেন সাকিব আল হাসানের কথা। বলছিলেন, দলে তার মতো একজন অলরাউন্ডার কতটা নির্ভার করে দিতে পারে একজন অধিনায়ককে। তাই বলে মাশরাফি ভুলে যাননি মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমানের ব্যাটিং বা মাহমুদউল্লাহর বোলিং সাফল্যকে। সাকিবকে পাশে বসিয়ে পিঠ চাপড়েছেন সবার। সাফল্যের কৃতিত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন পুরো দলের মধ্যে, ‘রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) স্পেলটা খুব ভালো ছিল। আমার খুব ভালো লেগেছে ওর বোলিং দেখে। দলে হয়তো একজন অসাধারণ পারফর্ম করে। কিন্তু ম্যাচ জিততে হলে অন্যদের সমর্থনও লাগে। যে রকম আজকে (গতকাল) হয়েছে। ১১ জনকেই চেষ্টা করতে হবে কোনো না কোনোভাবে দলে অবদান রাখতে।’
এবারের বাংলাদেশ সফরটা জিম্বাবুয়ের জন্য কাটছে খুবই বাজে। ৩-০-তে টেস্ট সিরিজ হারার পর ওয়ানডের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের কাছে হার। হেরেছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডেতেও। পারফরম্যান্সে তো বটেই, তাদের শরীরী ভাষায়ও ফুটে উঠছে অসহায়ত্ব। এ রকম একটা দলের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এক-দুই ম্যাচে আয়েশি ভাব চলে আসতেই পারে ক্রিকেটারদের মধ্যে। তবে এ ব্যাপারে মাশরাফির দর্শন অন্য রকম, ‘আয়েশি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা ম্যাচ জিতে তো আমরা সিরিজ জিতে যাইনি। আর পাঁচ ম্যাচের আগে সিরিজ জিতে গেলেও যে আমরা আয়েশে গা ভাসাব, আমার মনে হয় না সে সুযোগ আছে। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে এটা হওয়া উচিতও না। যারা একাদশে খেলবে তাদের আয়েশি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলাটা শুধু দলের জন্যই নয়, নিজের জন্যও। এখানে একটা সেঞ্চুরি বা ৫ উইকেট পাওয়ার সাফল্য একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে যেতে পারে পরের ধাপে। সে জন্য খেলোয়াড়দের নিজের কথা ভেবে হলেও প্রতিটি ম্যাচে সিরিয়াস থাকার পরামর্শ দিলেন অধিনায়ক, ‘আন্তর্জাতিক ম্যাচে দুটি উইকেট পেলে সেটা আপনার নামের পাশেই যোগ হবে। একটা ফিফটি করলে সেটাও যোগ হয়। এখানে যা-ই করেন না কেন সেটা ক্যারিয়ারের সঙ্গে যোগ হয়ে যায়। জিরো মারলে গড় কমবে, বোলিং খারাপ করলে স্ট্রাইক রেট বাড়বে। আমার বিশ্বাস, সবারই এটা মাথায় আছে।’
গা-ছাড়া ভাব দেখানোর সুযোগ তো দেখছেনই না, প্রথম ম্যাচে অমন সহজ জয় পাওয়ার পরও দলের অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন দেখছেন মাশরাফি, ‘উন্নতির জায়গা অনেকই আছে। জিতেছি তো এক-দুই বা তিনজনের পারফরম্যান্সে। টপ অর্ডারে রান করতে হবে। টেস্ট ম্যাচে এটা হয়েছে, কিন্তু আজ (পরশু) হয়নি। বোলিংয়ের শুরুতে খারাপ করেছি, এখানেও উন্নতি দরকার। কোনো না কোনোভাবে এসব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়াও একটা উন্নতি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে আসল পার্থক্যটা তুলে ধরতে প্রতিটি ম্যাচেই তা করে দেখাতে হবে বাংলাদেশকে।