সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ‘গণমাধ্যমের কাছে খোলা চিঠি’ শিরোনামে এ চিঠিটি পার্থ তাঁর ই-মেইল আইডি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিলেট কার্যালয়ে ও গণমাধ্যমের কর্মীদের ব্যক্তিগত আইডিতে পাঠান। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে পার্থ চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের সভাপতি হুসাইন মোহাম্মদ সাগর গত রোববার ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খোলা চিঠি’ দেন। এর এক দিন পর আজ ‘খোলা চিঠি’ দিলেন পার্থ। চিঠিতে গত ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় নাম উল্লেখ না করে সিলেটের আওয়ামী লীগের এক নেতাকে দায়ী করেছেন তিনি।
চিঠির শুরুতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার প্রেক্ষাপট, সাংগঠনিক তৎপরতা চালানোর শুরুতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন পার্থ। ‘প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা’ সম্বোধন করে চিঠির শুরুতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমি ছাত্রলীগ করায় ও সভাপতি হওয়ার কারণে বর্তমানে আমি ক্লাস-পরীক্ষা দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল আমাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে তৎপর হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদককে গুরুতর আহত করার অপরাধে উত্তম কুমার দাসকে (বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য) ২০০৮ সালে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবুও তাঁর সন্ত্রাসী কাজকর্ম থেমে থাকেনি। তার পরও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি মহল বহিষ্কৃত উত্তম দাসকে সভাপতি করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাঁর গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ছাত্রলীগের পবিত্র দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করে। পদ না পাওয়ার জের ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমনকে ৮ মে, ২০১৩ কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। শামসুজ্জামান এখনো পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যাপন করছেন।’
চিঠিতে নতুন কমিটির নেতাদের ওপর পর্যায়ক্রমিক হামলার বর্ণনা দেওয়া হয় এবং এ জন্য উত্তম দাসকে দায়ী করে সিলেট আওয়ামী লীগের একটি মহলকে অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নিতেই এরা তৎপর।
নাম উল্লেখ না করে চিঠিতে বলা হয়, ‘সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নীরব ভূমিকা পালন করে। উত্তম দাস গংরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে স্থানীয় বহিরাগতদের টাকার বিনিময়ে হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশের বাধা সৃষ্টি করে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওই মহলের সহযোগিতার কারণে উত্তম দাস গং সন্ত্রাসীরা বর্তমান কমিটির নেতাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে এবং ক্যাম্পাসে ছিনতাই-চুরি, রাহাজানির রাজত্ব কায়েম করছে।’
২০ নভেম্বর সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির নেতারা তাঁদের শিক্ষার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গত ২০ নভেম্বর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আগে থেকে প্রস্তুত উত্তম এবং অঞ্জন গং সন্ত্রাসীরা, সিলেট পলিটেকনিক এবং সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ছাত্রলীগ নামধারী ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং স্থানীয় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিলেটের এক নেতা এবং স্থানীয় মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রত্যক্ষ মদদে তাঁরা আমাদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। আমরা বাধা দিলে, আমাদের ওপর এলোপাতারি গুলি বর্ষণ করে, এতে আমাদের চারজন গুলিবিদ্ধ হয় এবং তাদের গুলিতেই তাদের একজন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিহত হয়।’
Collected
Post by : Shishir Azim Akash