খলিলুর রহমান, কিশোরগঞ্জ থেকে ঃ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার দুই সহোদর রাজাকার এটিএম নাসির উদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রায় সারে চার বছর পর অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন পর হলেও তদন্ত চূড়ান্ত করায় মামলার বাদী ও তার লোকজন আনন্দিত এবং তারা আশা করছেন দ্রুত আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের আয়লা গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছিল স্থানীয় রাজাকার-আলবদররা। করিমগঞ্জের আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেন হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ২০১০ সনের ২ মে মামলা দায়ের করেন শহীদের ছেলে গোলাপ মিয়া। মামলা দায়েরের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা একাধিকবার সরজমিন এলাকা পরিদর্শন করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর আসামীদের পক্ষ থেকে বাদী ও তার লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষ। তারা অভিযুক্ত রাজাকারদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের টেস্টে ফলে করা ১৯৬ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দ্বিগুণ ফি আদায়ের অভিযোগ
খলিলুর রহমান, কিশোরগঞ্জ থেকে ঃ কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফির চেয়ে দ্বিগুণ ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার ২নং রাউতি ইউনিয়নের পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে টেস্টে (নির্বাচনী পরীক্ষায়) উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ১০ জন। বিষয়টি গোপন রেখে ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যায়ের অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় নিয়মিতÑঅনিয়মিত মিলিয়ে অংশ নিচ্ছে ২১৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দশম শ্রেণীর এসএসসি টেস্টে অংশগ্রহণ করে ২০৬ জন। অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ১০ জন! আর বাকি ১৯৬ জনই ফেল করেছে। তার মধ্যে পাঁচ বিষয়ে ফেল করেছে এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ২০Ñ২২ জন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও অভিভাকরা জানিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন ফলাফল খুবই হতাশা জনক। তবে কেউ কেউ দাবি করছেন, ফরম পূরণে অর্থ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে শিক্ষকরা পরিকল্পিত ভাবে টেস্টের এ ফলাফল দাঁড় করিয়েছেন। ব্যাপক হারে ফেল করার বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গোপন রেখে ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের ফরম পূরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক এলাকাবাসী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে টাকা কম নিয়ে ছাড়ও দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুরুড়া বাজার কমিটির সাবেক সভাপতি ও পরীক্ষার্থীর অভিভাক খোকন উদ্দিন ভূঞা বলেন, আমার মেয়ে রেশমা আক্তার আর্স থেকে টেস্টে চার বিষয়ে ফেল করেছে। আমি ১৮০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করিয়েছি। তবে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫০০/২৮০০ টাকা নেয়া হয়েছে।
পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসা শাখার পরীক্ষার্থী তামান্না আক্তার জানায়, সে টেস্টে একাধিক বিষয়ে ফেল করেছে। সে ফরম পূরণ করেছে দুই হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে। পুরুড়া বাজারের ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি সাধারণ মানুষ, স্যারেরা বলেছেন আমার ছেলে টেস্টে তিন বিষয়ে ফেল করেছে। তাই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফরমফিলাপ করিয়েছি। বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক সোজাতুল্লাহ্ সুজন জানান, বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী আমাকে জানিয়েছে তাদের কাছ থেকে ২৮০০/২৯০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে কোনো শিক্ষার্থী রশিদ দেখাতে পারে নাই। বিনা রশিদে তারা টাকা দিয়েছে।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি বিজ্ঞান শাখায় এক হাজার দুইশত ৮৫ টাকা এবং ব্যবসা ও মানবিক শাখায় এক হাজার একশত ৯৫ টাকা করে। এর বিপরিতে তাড়াইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ফি নির্ধারণ করেছে বিজ্ঞান শাখায় দুই হাজার ছয়শত টাকা এবং ব্যবসা ও মানবিক শাখায় দুই হাজার পাঁচশত টাকা করে। পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়েই এসএসসির ফরম পূরণে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৮০০Ñ২৯০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুরুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে পাঁচ বিষয়ের ওপরে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে ২৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে গরীব হওয়ার কারণে কোনো কোনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কমও নেয়া হচ্ছে। তিনজন শিক্ষার্থীকে একদম ফ্রি ফরম পূরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩০০ টাকা দিয়েও ফরম পূরণ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক মহিউদ্দিন জানান, বিদ্যালয়ের ১৮০৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১০ জন শিক্ষক রয়েছে। এলাকার লোকদের অসহযোগিতার কারণে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। এ জন্য খন্ডকালীন ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তাই কিছু অতিরিক্ত ফি নেয়া হচ্ছে। এখনো প্রতিষ্ঠানের ছয়টি পদ শূন্য রয়েছে।