ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধি:
বর্তমানে রাজশাহীতে আইএফএমসি মাঠস্কুল রয়েছে ৫৪টি। এর মধ্যে দুর্গাপুরে ১০টি, পবা, তানোর, গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাট এবং বাগমারায়, ৬টি করে এবং মোহনপুরে ২টি। প্রতিটি স্কুলে পাঠ নিচ্ছেন ৫০ জন কৃষাণ-কৃষাণি। এদের মধ্যে একই পরিবার থেকে একজন নারী ও একজন পুরুষ সদস্য অংশ নিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইএফএমসি মাঠস্কুলে শেখানো হয় কৃষিতে বিজ্ঞান ভিত্তিক পন্থায় ধান-সবজিসহ সব ধরনের আবাদের কলা-কৌলশ। এছাড়াও গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মতভাবে হাসমুরগি, গাভী, ছাগল পালন, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ করে বাড়তি আয়ের পথও দেখানো হয় এ স্কুলে। কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়েও শেখানো হয় । আর সব প্রশিক্ষণই দেয়া হয় হাতে কলমে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হযরত আলী বলেন, প্রতিটি স্কুলে কারিগরি সেশন, সমন্বিত কৃষি ও সামাজিক সেশন, সমস্যা ভিত্তিক কৃষি কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, কৃষিকে কিভাবে শক্তিশালী, গতিশীল ও টেকসই করা যায় তা মাঠে গিয়ে শেখানো হয়। যাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরাই নতুনদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষক মাঠস্কুল থেকে বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। আর তার প্রয়োগ করছেন মাঠে। এতে গতি আনছে দারিদ্র্য মোচনে। বদলাচ্ছে দিন। কৃষক মাঠস্কুল সাবলম্বি করেছে রাজশাহী হাজারো কৃষককে। তাদের দেখাদেখি ও পথেই হাঁটছেন আরো অনেক কৃষক। আর ওই কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এ সংস্থাটির মতে, রাজশাহীতে কৃষক মাঠস্কুল চালু হয় নম্বয়ের দশকে। এর ক’বছর আগে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশজুড়ে চালু হয় এটি। অবশ্য বছর দশেক পরে রাজশাহীসহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায় কৃষক মাঠস্কুল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, তাদের তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সমন্বিত শস্য ব্যবস্থাপনা (আইসিএম) মাঠস্কুল। তবে বছরে দুই বার বোর ও রোপা আমন মৌসুমে এখনো চলছে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) মাঠস্কুল। এছাড়া বছর জুড়েই চলছে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা কম্পোনেন্ট (আইএফএমসি) মাঠস্কুল।
কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্রামের ক্ষুদ্র, মধ্যম কৃষক ও প্রান্তিক চাষী খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য মোচনে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি। আর এ জন্য প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এসব স্কুলকে অনুদান এবং সব ধরণের সহায়তা দেয়ার কথা জানান।
কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের গৌড়ীহার গ্রামের জাহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বললেন, তাদের ৪০ সপ্তাহের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে তিনি জমি চাষাবাদ করতেন। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেয়ার পর থেকে চাষাবাদে তিনি আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ করছেন। কিষানী হামেদা বেগম বললেন, তার বেশীরভাগ সময় কাটে গৃহস্থালির কাজ করে। মাঠস্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এরই মধ্যে তিনি বিজ্ঞানসম্মতভাবে হাসমুরগি, গাভী ও ছাগল পালন শুরু করেছেন। এতে তার আয় বেড়েছে। পরিবারে তার মূল্যায়নও বেড়েছে।
জেলার মোহনপুরের মুগরইল একতা আইপিএম কৃষক ক্লাবের সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে তিনি দুটি প্রকল্পে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন। এর আগে তার ক্লাবের সদস্যরা ধান ক্ষেতে পোকা দমনে আলোর ফাঁদ ও পাচিং এবং সবজি ক্ষেতে ফেরোমন ট্রাপ ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন। তাদের দেখে স্থানীয় কৃষকরাও এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন। কৃষক ক্লাব গঠনের পর সমাজসেবা অধিদফতরের নিবন্ধন নিতে গিয়ে নানান জটিলতার মুখে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লেগে যায় নিবন্ধন পেতে। কিছু পয়সাও খরচা হয়। এছাড়া কৃষকদের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অপরদিকে জেলার গোদাগাড়ীর দেলসাদপুর আইপিএম কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি খাইরুল ইসলাম বলেন, তারা নিজেরা ধান ক্ষেতে ভূগর্ভস্থ পানি সাশ্রয়ী এডাবি¬ইডি, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ, সার সাশ্রয়ী এলসিসি পদ্ধতির প্রশিক্ষণ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। পাশপাশি তারা এসব প্রযুক্তি অন্যকৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন।