[জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ন্যান্সির বাসায় কাজ করে সীমা নামে একটি মেয়ে। সেই মেয়ের জীবন বদলে দিয়েছেন ন্যান্সি। আর সেই অভিজ্ঞতার কথা নিজেই তার ফেসবুকে বর্ণনা করেছেন। লিখেছেন একটি লেখা। সেই লেখা পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।]
সীমা প্রতিদিনই আমার বাসায় কাজ করতে আসে। ওর কাজ করার ধরণ আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লাগে, আর তাই আমি তাকে অনেক স্নেহও করি। তবে প্রতিদিনই লক্ষ্য করতাম ওর মুখটায় কেমন যেন কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যেত। কয়েকদিন পর পরেই সে ২/১ দিন আর আসতো না। যখন আসতো তখন তার হাত ফুলে থাকতো নতুবা মুখ ফুলে থাকতো অথবা গায়ে প্রচুর জ্বর থাকতো।
এইতো সেদিন একই অবস্থা দেখে জানার আগ্রহ থেকেই তার কাছে গেলাম। হাত ধরে এনে আমার পাশে বসালাম। জিজ্ঞাস করলাম, কেন তার শরীরের এই অবস্থা। তাতেই বেরিয়ে এলো আসল ঘটনা, যা শুনে আমি কেন, যে কেউই নির্বাক আর নিস্তব্ধ হয়ে যাবে।
মাত্র কয়েক বছর আগে বিয়ে হলেও সাংসারিক সুখ শান্তির মুখ দেখেনি সীমা। স্বামী কামাল ছোট একটি কাজ করলেও এখন আর সেটি করেন না। এক কথায় বলতে গেলে বেকার। এদিকে দরিদ্র ঘরের সন্তান হওয়াতে নিজের স্বামীকে তেমন কোনো সহযোগিতা করাও সীমার পক্ষে সম্ভব নয়।
যাবতীয় পারিবারিক সমস্যা আর আর্থিক টানাটানিতেই শুরু হয় কলহ, যার বলি হয় সীমা। দিনের পর দিন স্বামীর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় সীমাকে।
nancy-2 সীমার জীবন বদলে দিলেন ন্যান্সি
ঠিক এভাবেই আমার কাছে একেকটি ঘটনার বর্ণনা করছিলো আর কান্নার সাগরে ভাসছিলো সে। শুনে আমি নিজেই মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে নিজে যেতে না পারায় তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য এবং ওষুধ কেনার জন্য কিছু টাকা দিলাম এবং পরদিন তার স্বামীকে আমার বাসায় নিয়ে আসার জন্য বললাম।
যথারীতি পরদিন স্বামী কামালকে নিয়ে আমার বাসায় এলো সীমা। দু’জনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিলাম কামালকে কোন একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেব। সেই অনুযায়ী সেদিনই একটি রিকশা কিনে দিলাম কামালকে।
তারপর পেরিয়ে গেল কয়েকদিন। আজ সীমাকে প্রশ্ন করলাম- ‘এখন জামাই মারে?’
হাসিমাখা মুখেই মাথা নাড়িয়ে আমাকে জবাব দিল- ‘না’
বিশ্বাস করুন, সীমার মুখে ঠিক ওই হাসিটাই আমি দেখতে চেয়েছিলাম। দেখে মনে হলো ওই হাসিতেই লুকিয়ে আছে ওর সমস্ত সুখ!
আমরা প্রত্যকেই যদি নিজের অবস্থান থেকে একটু সহানুভূতিশীল হই, যদি চারপাশের অন্তত একজন অসহায় মানুষের দ্বায়িত্ব নেই। যদি একজন গৃহহারা, সহায়-সম্বলহীন মানুষের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার চেষ্টা করি। অন্তত একজন ব্যক্তির এক মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেই। অথবা একজন সীমার মুখে হাসি ফুঁটিয়ে তুলি, তাহলে হয়তো খিদার যন্ত্রণায় কেউ রাস্তায় মরে পড়ে থাকতো না। রেল স্টেশনে কিংবা রাস্তার ধারে কাউকে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে হতো না। দিনের পর দিন স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে হতো না সীমাদের।
তাই আসুন,
অসহায়ের প্রতি বাড়িয়ে দেই সহানুভূতির হাত।
সেই হাত ধরেই এগিয়ে যাক আমার-আপনার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
Posted by Ab Emon