সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো সম্ভাবনা দেখছে না বিএনপি। এজন্য আর অপেক্ষাও করতে চায় না তারা। তাই নতুন বছরের শুরু থেকেই সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। তাদের প্রথম টার্গেট হবে ঢাকা অচল করা। এজন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, চলতি মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বিএনপি সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করেছে। তাই সরকারকে এক বছর সময়ও দেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়নি। কিন্তু সরকার এটাকে বিএনপির দুর্বলতা মনে করেছে। সঙ্কট সমাধানে কোনো আন্তরিকতা দেখায়নি। মধ্যস্থতাকারীর বিদেশি বন্ধুদের পর্যন্ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। তাই এখন আর সময় দেয়ার সুযোগ নেই। বিজয়ের এ মাসে ধারাবাহিক কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারবিরোধী শান্তিপূর্ণ তৎপরতা চালানো হবে। এরপর জানুয়ারির শুরুতেও হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে না। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় বড় ধরনের গণজমায়েতের মাধ্যমে মূলত কর্মসূচি শুরু হবে। সরকার যদি শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি করতে না দেয় তাহলে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও অসহযোগের মতো টানা কর্মসূচি দেয়া হবে। সরকার পতনের মধ্য দিয়েই সেই কর্মসূচি শেষ হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, এবার কর্মসূচি সফল করতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে দলের সবচেয়ে সুযোগ্য, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। আন্দোলন সফল করতে ঢাকা মহানগর কমিটিকেও বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিজয় দিবসের আগেই মহানগরের ১০০টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া আন্দোলন সফলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে চলতি মাসেই। সার্বিক বিষয় মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে তিনিই যোগাযোগ রাখছেন।
সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় আন্দোলন সফলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিলেও তৃণমূলের কার্যক্রমে যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেদিকে নজর রাখছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে বিএনপি সারাদেশ থেকে দলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবার সারাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে এক হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দলটি। সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, এবারের আন্দোলন হচ্ছে বিএনপির অস্তিত্ব বাঁচানোর আন্দোলন। তাই সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি সফল না করে ঘরে ফেরার কোনো উপায় নেই। বছরব্যাপী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাই এবার ব্যর্থ হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়া বিএনপির সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হচ্ছে জনগণ। জনগণই চাচ্ছে বিএনপি এখনই সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ুক।
বিএনপির এই নেতার দাবি, আন্তর্জাতিক মহলও এক তরফা নির্বাচনের সরকারকে পছন্দ করছে না। সংঘাত এড়াতে তারাও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে ছিলেন। এজন্য এক বছর তারা চেষ্টাও করেছে। কিন্তু সরকার তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় আন্তর্জাতিক মহলও চাচ্ছে রাজপথেই যেন সমস্যার সমাধান হয়। তাই আর অপেক্ষার কোনো সুযোগ নেই বিএনপির।
পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই দিনের কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। সরকারের আচরণের ওপর কর্মসূচির ধরন নির্ভর করবে।
দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, এখনো কর্মসূচির নাম ঠিক করা হয়নি। সারা শহর জনতার দখলে নেয়ার মতো কর্মসূচি হবে। হতে পারে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত হাতে হাত ধরে জনগণ দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাবে। তা করতে না দিলে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হবে। তাতেও সরকার বাধা দিলে দেয়া হবে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি। –
post by Usm,an gony
See more at: http://www.swadeshnews24.com