ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কে প্রযুক্তিগত ধারণা নিতে এবার দিল্লির সহায়তা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য আগামী বছরের শুরুতে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হচ্ছে। প্রতিনিধিদল ভারতের নির্বাচনে ব্যবহূত ইভিএমের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। মূলত কমিশনের অব্যবহূত ইভিএমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং এতোদিন যাবত্ প্রযুক্তিগত সহায়তাকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অসহযোগিতার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইভিএমের প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য বুয়েটের সহযোগিতা চাওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বুয়েটের কাছ থেকে ইভিএম ব্যবহারের সোর্স কোড না পাওয়ার কারণে ইসির সংরক্ষিত ইভিএমগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এজন্য কিভাবে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে ইভিএম প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।
ভারতে প্রতিনিধিদল পাঠানোর পাশাপাশি ইভিএম সম্পর্কে যেসব প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত ধারণা রয়েছে তাদের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মোকাম্মেল ওয়াহিদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তাদের উদ্ভাবিত ইভিএম নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই ইভিএমকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত ইভিএম দেখে মনে হয়েছে এটি এখনো ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ইভিএম প্রস্তুত করে পরবর্তীতে দেখাতে বলা হয়েছে।
ইভিএমের যাত্রা এবং সংকট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কারিগরি সহযোগিতায় ২০১০ সালের জুন মাসে সর্বপ্রথম বিগত নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করেছিল। চট্টগ্রামে ইভিএম ব্যবহার নিয়েও মামলা হয়েছে। বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। সবকটি কেন্দ্র ইভিএম ব্যবহার করে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করে কমিশন। কিন্তু ওই নির্বাচনে ইভিএমে ক্রুটি ধরা পড়লেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই মেয়র প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বেশি হওয়ায় সেটি নিয়ে ঝামেলা হয়নি।
বুয়েট ও ইসির দ্বন্দ্ব ব্যাটারি ব্যবহার নিয়ে। খরচ কম রাখতে কমিশন দেশি ব্যাটারি ব্যবহার করতে চাইলেও বুয়েট চেয়েছিল বিদেশি ব্যাটারির ব্যবহার। এই ইস্যুতে বুয়েটকে বাদ দিয়ে শেষমেষ কমিশন নিজস্ব জনবল দিয়ে রংপুরে ইভিএম ব্যবহার করে। এছাড়াও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌরসভার নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ জুন ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইভিএমে ত্রুটির কারণে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৮নং ওয়ার্ডের ৩৯নং টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রের কাউন্সিলর প্রার্থীর ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট সম্পন্ন করা হয়। গত বছরের ২০ জুন গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ঘোষণা দিলেও পরে আর ব্যবহার করা হয়নি। এরপর আর কোন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়নি। মূলত আইটি শাখার দুর্বলতার কারণে ইভিএম প্রযুক্তিতে এগুতে পারছে না কমিশন।
Post by আশিকুর রহমান স্বদেশনিউজ২৪.কম