খলিলুর রহমান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ প্রতিবছর শীতের শুরুতে অতিথি পাখির আনাগোনা ও কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে কিশোরগঞ্জের জোয়ানসাঁই হাওর। এবার অতিথি পাখিদের মধ্যে পানকৌড়ি আর সাদাবকের উপস্থিতি সকলের নজর কাড়ে। এসব পাখি সারাদিন জলাশয়ে খাবার খেয়ে ফিরে আসে হাওরের চিরচেনা ছাতিরচর গ্রামে, যেন পানকৌড়ির ডানায় এখানে সন্ধ্যা নামে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু শিকারীর দুর্দান্ত লোভ ও ফাঁদে আটকা পড়ে দিন দিন কমছে অতিথি পাখি। আগে হাঁস প্রজাতির রেন্জা পথে ঘাটে কিক্রি হতে দেখা যেতো। উপার্জনের লোভে একদিকে জাল পেতে অন্যদিক থেকে অতিথি পাখিদের তাড়িয়ে ফাঁদে ফেলতো শিকারীরা। বহিরাগত কিছু উচ্চবিলাসীর অভিনব পাখি শিকারের প্রবণতা দেখে স্থানীয় শিকারীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠে। বাধাহীণভাবে চলে এ নিধনযজ্ঞ। এখন রেন্জা কমে গেলেও হাওরের নয়নবালি, বেংলা, কৈয়া, কাইরা, ঘোড়াউত্রা, নরসুন্দাসহ বিভিন্ন জলাশয়গুলোতে চলে পানকৌড়ির জীবিকা অন্বেষণ। সন্ধ্যার আগেই ফিরতে শুরু করে নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনয়ন করবস্থানের বৃক্ষরাজির ঠিকানায়। এখানেও শিকারীর তীক্ষèদৃষ্টির তীরের গুলি পাখিদের বক্ষ ছেদ করে। এছাড়া কালবৈশাখী ঝড় পানকৌড়ি ও সাদাবকের নিদান কাল। প্রচন্ড ঝড়ে আহত পখিগুলো মাটিতে পড়ে ডানা ঝাপটাতে শুরু করলে স্থানীয় মাংসাসীরা পাখিদের কুড়িয়ে বস্তাভরে। তার পর এক এক করে জবাই করে চলে পাড়াপড়শির উৎসব। এভাবে নিঃশ্বেষ হতে থাকে পানকৌড়ি ও সাদাবক। গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিনিধির হাতে ধরা পড়ে একজন শিকারী। তৎক্ষনাৎ কেড়ে নেওয়া হয় তার শিকারের গুলাইল। শিকারীর নাম রুবেল। বাজিতপুর উপজেলায় তার বাড়ি। সে বরাবরই এখানে বেড়াতে এসে এভাবে নিধনযজ্ঞ চালায়। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উৎসাহিত হচ্ছে অন্যরাও। এব্যপারে কারো মাথাব্যথা নেই বলে জানালেন পাখি প্রেমিক কাজী নূরুল ইসলাম মাস্টার। তিনি বলেন, আমি নিজ চোখে পাখি ধরে বস্তা ভরে বিলিবন্টন করতে দেখেছি। অথচ পাখি গুলো দূরের ভৈরব, কুলিয়ারচর, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও বাজিতপুরের বিভিন্ন জলাশয়ে খাবার খেয়ে একটু মাথা গুঁজার জন্য এখানে আসে। এখানেও পাখিদের নিরাপত্তা নেই। তিনি হাওরের পাখি সংরক্ষণে প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।