নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় নূর হোসেন কোনভাবেই জড়িত নয়, তিনি রাজনীতির শিকার দাবি নূরের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া ওয়াহিদুজ্জামান সেলিমের। সেলিম জানান ‘আমি যতদূর জানি ওই খুনের সঙ্গে নূর হোসেন জড়িত নয়’।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও বরিষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের অপহরণ ও খুনের ঘটনায় প্রধান আসামি নূর হোসেনকে গত ১৪ জুন কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা কৈখালি’র একটি বহুতল আবাসন থেকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা পুলিশ। নূরের সঙ্গেই ওইদিনই গ্রেফতার করা হয় ওয়াহিদুজ্জামান সেলিম এবং খান সুমনকেও। পরদিন ১৫ জুনই উত্তর চব্বিশ পরগানা জেলা আদালতে তোলা হয় তাদের। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪ বিদেশি নাগরিক আইন (ফরেনারস অ্যাক্ট) লঙ্ঘনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপর কয়েকদফা পুলিশি রিমান্ড এবং কারাগারের মেয়াদ কাটিয়ে গত শুক্রবার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান ওয়াহিদুজ্জামান সেলিম। তার আগে গত আগষ্ট মাসে জামিনে মুক্তি পান খান সুমনও। যদিও জামিন না হওয়ায় এখনও দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন নূর হোসেন।
আজ রবিবার কলকাতার একটি হোটেলে বসে এক সাক্ষাতকারে ওয়াহিদ্দুজ্জামান সেলিম জানান ‘কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ার পর ‘দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গেই কারাগারের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু নূর হোসেন কখনওই ওই খুন করেছেন বলে আমাদেরকে বলেননি বরং ওই ঘটনার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করতেন নূর ভাই’। সেলিমের মতে নূর হোসেন রাজনীতির শিকার হয়েছেন।
এই খুনের পিছনে কোন তৃতীয় শক্তির হাত আছে বলে জানিয়ে সেলিম বলেন ‘টেণ্ডার, ব্যবসা-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল এবং নূর হোসেনের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য ছিল ঠিকই কিন্তু আমরা যতটুকু জানি এই খুনের সঙ্গে নূর হোসেন জড়িত থাকতে পারেন না। তাকে সম্পূর্ণরূপে ফাঁসানো হয়েছে। হতে পারে কোন তৃতীয় শক্তি এই মনোমালিন্যের সুযোগ নিয়ে এই খুন করিয়েছে। সেলিমের মতে নজরুল ইসলামের সঙ্গে ঝামেলা থাকলে তা চেয়ারম্যান (নূর হোসেন)-এর সঙ্গে। সেক্ষেত্রে তর্কের খাতিরে নূর হোসেন যদি খুন করেই থাকেন তাহলে তার টার্গেট কেবলমাত্র নজরুল ইসলামই। কারণ অন্য কারও সঙ্গে কোনরকম বিবাদ ছিল না।
তবে সেলিমই নয়, কলকাতার আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় নূর হোসেনও একাধিকার গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনেছিলেন। এর পিছনে তৃতীয় শক্তি হাত আছে বলেও আদালতে প্রবেশের মুখে একাধিকবার বলেছিলেন নূর। যদিও সেই তৃতীয় পক্ষের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
সেলিম জানান আজমের শরিফে যাওয়ার জন্য আগে থেকেই আমার এবং খান সুমনের পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি করা ছিল। সেইমতো ১৩ জুন কলকাতায় আসি। কলকাতায় এসে জানতে পারি নূর হোসেনও কলকাতায় আছেন। এরপর চেয়ারম্যানের দাওয়াতে আমরা নূরের বাসায় যাই। সেখানেই একদল পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে’।
পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে ওয়াহিদুজ্জামান সেলিম বলেন ‘নূর হোসেন যদি অপরাধী হয়ে থাকে তবে তাকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। কিন্তু গত ১৩ জুন আমরা বৈধ ভাবেই কলকাতায় আসি। আমার এবং সুমনের কাছে থাকা বৈধ পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে আমাদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেফতার করে। বিনা দোষে ছয়টি মাস কারাগারের কাটাতে হলো। আমাদের সংসার আছে, সন্তান আছে, এটা বড় কষ্টের। হয়তো নূর হোসেন-এর সঙ্গে ছিলাম বলেই পুলিশ আমাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ জানান সেলিম।
তবে মামলা শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন জানি না ভবিষ্যতে কি হবে? দেশে ফিরতে পারবো কি না? তবে তার বিশ্বাস পাপি নই বলেই দেরীতে হলেও আমাদের জামিন হয়েছে, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছি। তবে প্রথমে মামলার সুরাহা হোক, তারপর পরবর্তী চিন্তাভাবনা করা যাবে বলে জানান সেলিম।
post by Usman gony