দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর এই শহীদ মিনার এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে দেশের অর্ধশতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এটিই প্রথম নির্মিত শহীদ মিনার, যেখানে ভাঁজ ভাঁজ মাটি দিয়ে বিদ্রোহ প্রকাশ করা হয়েছে। আবহমান বাংলার বিদ্রোহী চেতনায় ভূমির অংশগ্রহণ প্রকাশ করতে এমন ভাবে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানালেন এর নকশাবিদ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বিদ্রোহ আমাদের গৌরব। বাঙালি জাতির বিদ্রোহে ভূমি যে অংশ নেয় তার বহিঃপ্রকাশ শহীদ মিনারের স্থাপত্যশৈলীতে দেখানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ দেশের ভূমি থেকেই আমরা প্রেরণা নিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। বাংলার ভূমি তার ভেতর থেকে বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ করছে এমন বোধ জেগে উঠেছে নতুন নির্মিত শহীদ মিনারে।
পুনঃনির্মিত এই শহীদ মিনারের ১০০ ফুট চওড়া ভূমির ওপর ৪৫ ফুট উচ্চতার শহীদ স্তম্ভটি ছাড়াও অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা র্যাম্প, ভূগর্ভস্থ প্রদর্শনী কেন্দ্র ও গ্রন্থাগার, মুক্তমঞ্চ, অনুশীলন কক্ষ, গ্রিনরুম ও ব্যাক স্টেইজ এবং সম্মুখ চত্বর।
শহীদ মিনারে ভূগর্ভস্থে প্রদর্শনী কক্ষে একটি কর্নার থাকবে যেখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রকাশনা রাখা হবে। কেউ চাইলে বসে পড়াশোনা ও বই কিনে নিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকার ছবির হাটের ধরনে আউটডোরে প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারের কাজ বাস্তবায়ন করেছে। নতুন নির্মিত এই মিনারের জায়গাও আগের তুলনায় বেড়েছে।
সিসিক সূত্র জানায়, একই স্থানে আগের শহীদ মিনারের অবস্থান ছিল। যার আয়তন ১৯ শতক। তবে নতুন এই শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণের আগে পেছনের শহীদ সামসুদ্দিন হাসপাতাল থেকে ১৭ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করায় জমি বেড়ে ৩৩ শতক হয়েছে। ফলে শহীদ মিনারের সম্মুখ চত্বরে একই সঙ্গে ৪ হাজার মানুষ সমবেত হতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এই শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তবে উদ্বোধন হওয়ার আগেই এই মিনারের নান্দনিক নির্মাণশৈলী ও সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।
দেশের অন্যতম দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার এটি। নিজস্ব স্বকীয়তার কারণে এই স্থাপত্যটি অল্প দিনেই দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর শহীদ মিনারে পরিণত হবে বলেও মনে করেন তিনি।
পঁচিশ বছর আগে সিলেটে চারজন মুক্তিযোদ্ধার সাহসিক প্রচেষ্টা ও সাংস্কৃতিককর্মীদের সহযোগিতায় চৌহাট্টায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সে সময়ের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর সামাজিক সমর্থনে তৈরি শহীদ মিনার কালস্রোতে সিলেটের সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতীক।
২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তৌহিদি জনতার মিছিল থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। তাদের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহীদ মিনার। এরপর সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা শহীদ মিনার নতুন করে নির্মাণের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করে সিসিক।
পুনঃনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধনের মাধ্যমে আবারও সিলেটের সাংস্কৃতিক চেতনার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠবে এই প্রাঙ্গণ, সেই অপেক্ষাই এখন।