রাজনৈতিক উত্তাপ দিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০১৫। মূলত ৫ জানুয়ারিকে ঘিরেই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একতরফা নির্বাচনের এই দিনটিকে জনগণকে মনে করিয়ে দিতে দেশব্যাপী ব্যাপক শোডাউনের কর্মসূচি দেবে বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপিকে প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলা করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী যে কোনো কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশের মাধ্যমে একযোগে রাজপথে নামতে চান খালেদা জিয়া। এতে বাধা এলে তাৎক্ষণিকভাবে লাগাতার সহিংস কর্মসূচির দিকে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যেই যাতে সরকার নতুন নির্বাচনে বাধ্য হয় তেমনভাবেই আন্দোলনের ছক তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কূটনৈতিক মহল থেকেও সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, সর্বস্তরের জনগণকে তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের পক্ষে পাশে পেতে চান। শুধু আম জনতাই নয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে সিভিল প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদেরও পাশে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন বলেও দাবি করেন এই নেতা।
বিএনপির সিনিয়র আরেক নেতা জানান, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচির বিষয়টি বিশেষভাবে পরিকল্পনায় আছে। এছাড়া বছরের শুরু থেকেই বড় কর্মসূচি শরু হতে পারে। তবে এটা সরকারের ইচ্ছে-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ালে তাৎক্ষণিক ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধসহ রাজপথের কঠোর কর্মসূচি শুরু হবে।
জানা গেছে, নতুন বছরে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেশব্যাপী জনসম্পৃক্ত বড় ধরনের কর্মসূচি চলতি মাসেই পালন করবে বিএনপি। এর মধ্যে বেশির ভাগ কর্মসূচিই হবে ঢাকার বাইরে। ১৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্চে জনসভার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর ঢাকায় ঘরোয়া কিন্তু কার্যকরী সমাবেশভিত্তিক কর্মসূচি পালিত হবে। এসব কর্মসূচি সফলে দায়িত্ব পালন করবে মুক্তিযোদ্ধা দল ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সফলের সেনানিরা। আর মাসের শেষ দিকে সিলেট, চট্টগ্রাম এবং বরিশালে রোডমার্চ করবে বিএনপি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন। বিএনপি সূত্র জানায়, এবার আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করতে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। কর্মসূচি সফল করতে দলের সবচেয়ে সুযোগ্য, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতাকর্মীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে কর্মসূচি সফল করার মতো প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। আন্দোলন সফলে সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ ঢাকা মহানগর কমিটিকেও বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। বিজয় দিবসের আগেই মহানগরের ১০০টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া আন্দোলন সফলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে চলতি মাসেই। আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয় মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে তিনিই যোগাযোগ রাখছেন।
সূত্রমতে, কেন্দ্রীয় আন্দোলন সফলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিলেও তৃণমূলের কার্যক্রমে যাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেদিকে নজর রাখছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে বিএনপি সারাদেশ থেকে দলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবার সারাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে এক হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দলটি। সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন করতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিজয়ের বর্ষপূতি পালনের জন্য মিছিল, সভা, সমাবেশ ও সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। তবে এখনো নির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্রমতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী জোটের আন্দোলন মোকাবেলায় আগে-ভাগেই রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে চলছে দল গোছানোর কাজ। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়া বিভিন্ন জেলা, থানা, উপজেলা ও নগরসহ দলের তৃণমূল সম্মেলন সেরে ফেলা হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই বাকি শাখারও সম্মেলন শেষ করার মাধ্যমে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের নতুন করে চাঙ্গা করার টার্গেট রয়েছে। এ ছাড়া মিছিল, সভা, সমাবেশ ও সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। থাকবে সরকারবিরোধী যে কোনো কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচিও।
আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপিকে কোনোভাবেইে মাঠ ছেড়ে দেয়া হবে না। নিয়মিত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলন ও সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকা– জনগণের কাছে তুলে ধরতে সেমিনারসহ সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
সরকারি দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিরোধী জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে দলের পাশাপাশি প্রশাসনিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে সরকার। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে যাতে বিরোধী জোট কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সে লক্ষ্যে আরো কঠোর হচ্ছে সরকার। বিএনপি যেন রাজপথ দখলে নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে কারো দূতিয়ালির পরিবেশও সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলোকে সচল করে এবং নতুন মামলায়ও গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সহিংসতা দমনের নামে সারাদেশে কয়েক দফা গণগ্রেপ্তার সেরে ফেলেছে প্রশাসন। বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পুরনো মামলা সক্রিয় করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। আন্দোলন চাঙ্গা হলে এসব মামলায় আবারো গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে।
সূত্রমতে, বিএনপি-জামায়াত আবারো আন্দোলনের নামে সহিংসতা বা জ্বালাও-পোড়াও করলে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না সরকার। এ লক্ষ্যে পুলিশ, র্যাব এবং সবকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগেভাগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মী রাজপথে সহিংস হয়ে উঠলে প্রশাসনিকভাবে তা দমন করার নির্দেশ রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর।
বছরের শুরুতে আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। নতুন বছরের শুরুতে তা আরো তীব্র হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে কর্মসূচি হবে।
বিএনপির কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগের দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তাদের বাধা নেই। তবে যদি কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দমন করবে।
Post by আশিকুর রহমান চৌধুরী স্বদেশনিউজ২৪.কম