চাকরি বিধিভঙ্গ করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করায় চাকরি হারালেন ওএসডি যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীর। গতকাল তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ওই বৈঠকে অংশ নেয়া আরো ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একেএম জাহাঙ্গীরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারি করে।
যুগ্ম সচিব মুহিবুল হক স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, একেএম জাহাঙ্গীরের চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। সরকার জনস্বার্থে তাকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া প্রয়োজন বিবেচনা করেছে। এ জন্য গণকর্মচারী (অবসর গ্রহণ) আইন, ১৯৭৪ এর ৯ (২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সুবিধা পাবেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বিগত বিএনপি সরকারের সময় জাহাঙ্গীর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (অ্যাপয়নমেন্ট, পোস্টিং, ডেপুটেশন) অনুবিভাগে ছিলেন। এই বিভাগ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়টি দেখা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈঠক করেছেন তাদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। ওই দিনের ঘটনায় যারা জড়িত ছিলেন সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মচারীদের বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হবে। গত ৪ রাতে ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় তোলে।
তবে সরকারি কর্মকর্তার বৈঠকের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও একে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয় বিএনপি। ঘটনার রাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই খবরটি আদৌ সত্য নয়, এর কোনো সত্যতা নেই। সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই সংবাদটি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার করা হচ্ছে।
এই সংবাদ প্রচার ও প্রকাশের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও দাবি করা হয় বিএনপির সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমানের স্বাক্ষরে পাঠানো ওই বিবৃতিতে।
তবে ওই ঘটনাকে হালকাভাবে নেয়া হবে না জানিয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা আগেই বলেছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত করার কথা গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের জানান।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রশাসনের বর্তমান যেসব কর্মকর্তা বৈঠক করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।