দেশজুড়ে কয়েকদিনের শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাবনার চাটমোহরে শীতজনিত কারণে ১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে কোথাও কোথাও কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে কয়েকদিনের টানা শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীত বেশি হওয়ায় বিভিন্ন শীতবস্ত্রের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। গত কয়েকদিন থেকে সারাদেশের ন্যায় জয়পুরহাট জেলার সর্বত্র শীত জেঁকে বসেছে। সেই সঙ্গে ঠা-া বাতাসে শীতের তীব্রতা আরো বেড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। শীতে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতের তীব্রতা দিনদিন বাড়ার কারণে কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটছে। জেলার কৃষকরা আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমের জন্য বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না, যারা বীজ বপন করেছেন, ােসগুলোও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দিনমজুররা কাজের অভাবে বেকার হয়ে পড়ছেন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে নিউমোনিয়া, ব্রনক্রাইটিস, ডায়েরিয়া এবং অ্যাজমাসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাইদুর রহমান জানান, শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা ভর্তি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। শীত বেড়ে যাওয়ায় হকার্স মার্কেটে শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে নিম্নবিত্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। সেই সুযোগে বিক্রেতারাও শীতের কাপড়ের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়িয়েছেন।
চাটমোহর (পাবনা) : চলনবিল অঞ্চলে শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতে কোল্ডস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চাটমোহর উপজেলার খতবাড়ি গ্রামের মিন্টু প্রামাণিক (৪৮) নামের ১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এখনো সরকার কিংবা কোনো সংগঠন শীতবস্ত্র নিয়ে দরিদ্র মানুষের পাশে এগিয়ে আসনি। হাট-বাজারে গরম কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় গরিব মানুষ তা কিনতে পারছেন না। ৩ দিন ধরে চলনবিল অঞ্চলের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও রায়গঞ্জসহ ৯টি উপজেলা কুয়াশায় অন্ধকার হয়ে আছে। বিকাল ৫টা পর কুয়াশার কারণে সড়কগুলোতে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষেত-খামারে এমনকি রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। চলনবিলের অনক স্থানে সূর্যের দেখা মিলছে না। চলনবিল অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। চলনবিলের ৯টি উপজেলার নতুন এবং ফুটপাতের পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোয় ভিড় বেড়েছে। দামও বেড়েছে অনেক। এতে দরিদ্র মানুষরা বিপাকে পড়েছেন। তবে এখনো সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান গরম কাপড় নিয়ে এ অঞ্চলের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। চাটমোহর উপজেলার খতবাড়ি গ্রামে অতিরিক্ত ঠা-ার কারণে শুক্রবার রাতে কোল্ডস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মিন্টু প্রামাণিক নামের ১ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শীতের কারণে বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল নষ্টের উপক্রম হয়েছে।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : মঠবাড়িয়ায় শীত জেঁকে বসেছে। শীতের তীব্রতায় জনজীবনে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ২-৩ দিন ধরে কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না। প্রচ- শীতে বলেশ্বর নদ তীরবর্তী ৫টি ইউনিয়নের জেলে পল্লীসহ বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১০ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কুয়াশা ও ঠা-া বাতাসের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঠা-াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত পৌষের মাঝামাঝি বা মাঘের শুরুতে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় কিন্তু এবার অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সপ্তাহেই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ঘন কুয়াশায় চারদিক ঢেকে আছে। সারা দিনও সূর্যের দেখা মিলছে না।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে মেঘলা আকাশ আর উত্তর থেকে ধেঁয়ে আসা কনকনে হাওয়ায় শীতের প্রকোপ আরো বেড়েছে। শুক্রবার সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। শনিবার সকালে সূর্যের দেখা মিললেও সারাদিনই মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছে। রাতে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করেছে। এদিকে জেলার প্রায় ৫০ হাজার শীতার্ত মানুষ একটি কম্বলের আশায় চেয়ে আছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ১ হাজার ৮৮২টি কম্বল বিতরণ করা হলেও শীতার্ত মানুষের তুলনায় তা খুবই সামান্য।
collected by asআশিকুর রহমান চৌধুরী স্বদেশনিউজ২৪.কম