রুবেল আহম্মেদ বেনাপোল থেকে(যশোর): যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুরে চীর নিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ শেখ নূরমোহাম্মদ। একই সাথে এখানে শায়িত আছেন তার সহযোগী আরো ৬ সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এছাড়া এই উপজেলার আনাছে কানাছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আরো অনেক সমাধী ¯’লসহ গণকবর রয়েছে। কিš‘ এই গর্বিত সন্তানদের নামে আজও এখানে কোন সড়কের নামকরণ হয়নি। বিশেষ করে বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ শেখ নূরমোহাম্মদের নামে কোন সড়ক না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুক্তি যোদ্ধারা।
শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মনজু জানান, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এলাকা ছিল শার্শা। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ হয় এখানে। ৮ নং সেক্টরের অধীনে এ এলাকা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক এলাকা। জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে ভারতের সাথে সীমান্ত ও যশোরে সেনানিবাস থাকার কারণে এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ এক ভয়াবহ ও রক্তাক্ত অব¯’ার মধ্যে শেষ হয়। ২৬ শে মার্চের পরে পাক হানাদার বাহিনির সদা সর্বদাই নজর ছিল এই সীমান্ত জেলার গ্রামগুলোর উপর। যশোরের বেনাপোল, শার্শা ও চৌগাছা থানার সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর উপর পাক সেনাদের ছিল ব্যাপক রোষানল। পাক সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সাথে ইপিআর ও মুক্তিবাহিনীর সাথে অসংখ্য জায়গায় সম্মুখ ও হাতাহাতী যুদ্ধ হয়। আধুনিক সামরিক মরনাস্ত্র সজ্জিত পাক বাহিনীর হাতে প্রান দিয়েছে হাজার হাজার ইপিআর, মুক্তিযোদ্ধা ও এদেশের সাধারণ নিরস্ত্র মানুষ নারী,পুরুষ ও শিশুরা। গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে পাক সেনা ও তার দোসর রাজাকার বাহিনীরা। পৃথিবীর ইতিহাসে এ জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের অনেক ঘটনা দেশবাসি জানে, তবে এখনও অনেক ঘটনা, হত্যাযজ্ঞ এবং গনকবর আছে তা দেশবাসী বা পৃথিবীর অনেকেই জানেনা।
এসময় তিনি আরো বলেন, পাক সেনাদের নৃশংসতার শিকার হয়ে শার্শার মাটিতে জীবন হারায় বীর শ্রেষ্ঠ্র শেখ নূর মোহাম্মদ। তার সমাধী দেওয়া হয় শার্শার কাশিপুর গ্রামে। কিš‘ তার নামে এখানে আজও কোন সড়কের নাম করণ করা হয়নি। তিনি সরকারের কাছে শার্শায় বীর শ্রেষ্ঠ্র নূরমোহাম্মদ সড়ক নামে একটি সড়কের নাম করনের জোর দাবী জানান তিনি।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ্র নূরমোহাম্মদ যশোর ০৮ নাম্বার সেক্টরের অধিনস্ত ০৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নে (ইপিয়ারের সাবেক চতুর্থ উইং) বাঙালী সেনাদের নিয়ে গীঠত একটি কোম্পানীতে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যোগদান করেন। সেদিন ছিল ০৫ সেপ্টম্বর ১৯৭১ সাল। তিনি শার্শা উপজেলার পাশবর্তী গ্রাম গোয়ালহাটিতে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ছুটিপুর পাকহানাদার বাহিনীর ঘাটিতে আঘাত হানেন। ওই যুদ্ধে একটি এলএমজি দিয়ে যুদ্ধ করছিল তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা নানু মিয়া। যুদ্ধ করতে করতে হানাদার বাহিনীর গুলিতে মারাত্বক ভাবে আহত হন নানু মিয়া। ঠিক ওই সময় লেন্স নায়েক নূরমোহাম্মদ তার পাশে থেকে যুদ্ধ করছিলেন। নানু মিয়া আহত হওয়ার সাথে সাথে ল্যেন্স নায়েক নূরমোহাম্মদ নানু মিয়াকে চিকিৎসা করানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধোরের নির্দেশ দেন। তিনি ওই এলএমজি নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে এক পর্যায়ে শত্রু পক্ষের মর্টার সেলের আঘাতে মারাতক্ব ভাবে আহত হন। মৃত্যু আসন্ন জেনে তিনি সিপাহী মোস্তোফা কামালের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেন। এবং আহত সিপাহী নান্নু মিয়াসহ যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিরাপদ ¯’ানে যেতে নির্দেশ দেন। তিনি একটি ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নেন। কিছু সময় পরেই তার অন্যান্য যুদ্ধরত সাথীরা ল্যান্সনায়েক নূরমোহাম্মদের মৃত্যু দেহ দেখতে পায়। পাকহানাদার বাহিনীদের বুলেটে তার সমস্ত শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। বেয়নট দ্বারা নূরমোহাম্মদের দুটি চোখ উপড়ে ফেলেছিল শত্রু পক্ষের পাক হানাদার বাহিনী। পরে গ্রামবাসী তার মৃতদেহ শার্শার কাশিপুর নামক গ্রামে সমাধিস্ত করে।
ল্যান্সনায়েক নূরমোহাম্মদ ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে সর্বো”চ ¯’ান করে সর্বো”চ সম্মানে বাঙালীকে প্রতিষ্ঠিত করে যাওয়ার জন্য সেদিন যে ভালোবাসা প্রদর্শন করেছিলেন তার কোন তুলনা নেই। নজীর বিহীন সাহসী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি রাষ্ট্রীয় ভাবে সর্ব শ্রেষ্ট্র সম্মানে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিলেন। স্বাধীনতার সৈনিক হিসাবে সর্বো”চ বীর শ্রেষ্ট্র খেতাবও পেয়েছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের তার এই আত্মত্যাগ জাতী চীর দিন শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করবে। #
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘন্টা,১৪ ডিসেম্বর ২০১৪
প্রতিবেদক: রুবেল আহম্মেদ