দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেল যোগাযোগ আরো উন্নত করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চালু করতে চায় হাইস্পিড ট্রেন বা দ্রুতগতিসম্পন্ন ট্রেন।
বিশ্বের উন্নত দেশের মতো দেশের দ্বিতীয় রাজধানী বা বাণিজ্যিক রাজধানী বলে খ্যাত অতি গুরুত্বপূর্ণ এ রুটে ট্রেনটি চলবে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের মোট ২৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টার চেয়ে কিছু বেশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এ ট্রেনের রুটটি চালু করতে নির্মাণ করা হবে আলাদা অ্যালিভেটেড (উড়াল) বৈদ্যুতিক রেলপথ। এতে চলাচল করবে হাইস্পিড (দ্রুতগতি) ট্রেন। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি, মোহনপুর, ময়নামতি, লাকসাম, ফেনী, চিনকি আস্তানা, সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও উন্নত সেবামূলক বাহনে পরিণত করতে এ বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেল সূত্র জানায়, সাধারণ রেললাইনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষ পদ্ধতির এ রেললাইন তৈরিতে ব্যয় হবে প্রায় ৩৮৭ কোটি ডলার বা ৩১ হাজার কোটি টাকা। নতুন পদ্ধতির এ ট্রেনটি চালু করা গেলে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এটি চালু হলে সময় সাশ্রয় তো হবেই পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে প্রায় ৮০ কিলোমিটার।
রেলসূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালু করতে গত আগস্টে সিআরইইজিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর ভিত্তিতে ইতোমধ্যে সিআরইইজিসি প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই সম্পন্ন করেছে। সম্প্রতি রেলওয়ের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হাইস্পীড এসব ট্রেন চালু করতে বিশেষ ধরনের রেলপথ দরকার। এ জন্য বিদ্যমান রুটের পরিবর্তে সরাসরি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি, মোহনপুর, ময়নামতি, লাকসাম, ফেনী, চিনকি আস্তানা, সীতাকুণ্ড হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ কমানো ও অধিক গতির জন্য উড়ালপথ নির্মাণ হবে সাশ্রয়ী।
সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন প্রকল্পের আওতায় স্ট্যান্ডার্ড গেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। চতুর্মাত্রিক (ফোরডি) ট্রেন এ পথে চালানো হবে। দৈনিক ৮০ জোড়া ট্রেন চালানো যাবে এ পথে। ডিজেল ও বৈদ্যুতিক দুই ধরনের ব্যবস্থাই রাখা হবে এতে। তবে ডিজেল ট্রেনের গতি কিছুটা কম হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেনে ভাড়া কিছুটা বেশি হবে। নন-এসি আসনে ভাড়া হবে ১ হাজার ২০০ টাকা, বর্তমানে যা ৩৩৪ টাকা আর এসি আসনের ভাড়া হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা, বর্তমানে যা ৬৬০ টাকা।
রেল সূত্রে জানা যায়, দুই ধাপে ৩ বছরে এ রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ঢাকা-লাকসাম রুটে প্রায় ১১১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় হবে প্রায় ২০৬ কোটি ডলার। এ অংশে কয়েকটি বড় সেতু নির্মাণের প্রয়োজন হবে বিধায় ব্যয় তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হবে আর বড় সেতু না থাকায় লাকসাম-চট্টগ্রাম রুটে ১২১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াবে ১৮১ কোটি ডলারের মতো। সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৩৮৭ কোটি ডলার। পুরো অর্থই বিনিয়োগ করতে চায় সিআরইইজিসি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেকটা পথ ঘুরে ৩১২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হয়। এতে সময় লাগে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার কমে যাবে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, আগামী ৫০ বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের চাহিদা পূরণে হাইস্পিড ট্রেন পরিচালনা করা জরুরি হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে বর্তমান রুটে পণ্যবাহী ট্রেন এবং বিভিন্ন মেইল ও লোকাল ট্রেন চালানো হবে আর যাত্রী পরিবহন করা হবে দ্রুতগতির এসব ট্রেনে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তঃনগর ট্রেনের চেয়ে অত্যাধুনিক ও গতিসম্পন্ন এ ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা কেমন হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ ট্রেনের ভাড়া আর বিমানের ভাড়া প্রায় কাছাকাছি হবে বিধায় হাইস্পিড এ ট্রেনে একমাত্র অবস্থাসম্পন্ন ও তুলনামূলক উচ্চবিত্ত ও আরামপ্রিয় যাত্রীরাই কেবল চলাচল করতে পারবে। এতে সাধারণ যাত্রীরা এসব ট্রেনে চড়ার সুযোগ পাবেন না। তাছাড়া গত জোট সরকারের আমল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আধুনিক পদ্ধতির এসব ট্রেন চালুর কথা বলা হলেও দীর্ঘ বছর পার হলেও আজও এসব উদ্যোগ স্বপ্নেই রয়ে গেছে। তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
Posted by Ab Emon