একাত্তরে গণহত্যার দায়ে জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়েছে। বেলা ১২টার পর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন। রায়ে প্রসিকিউশন সন্তুষ্ট হলেও আসামিপক্ষ জানিয়েছে আপিল করবেন তারা।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে তার নেতৃত্বেই গঠন করা হয় কুখ্যাত কায়সার বাহিনী। আর এই বাহিনী হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে আগুন দেয়াসহ নানা অপরাধ করে। আর এসব ঘটনায় অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাতটি অভিযোগে তাকে ফাঁসি এবং বাকি সাতটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি দুটি অভিযোগে খালাস দেয়া হয় তাকে। পুরো রায় পড়েন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
রায়ের পর্যবেক্ষণে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারী ও যুদ্ধশিশুদের ক্ষতিপূরণ স্কিম চালু করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পাশাপাশি তালিকা করে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্যও বলেন ট্রাইব্যুনাল।
এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট হলেও খুশি হয়নি আসামি পক্ষ। রায় প্রকাশের পর গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত সন্তোষ প্রকাশ করে এ রায়কে ব্যতিক্রমধর্মী বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, ন্যায়বিচার পাননি উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহাজাহান বলেছেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পলাতক থাকলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবার রাজনীতি শুরু করেন কায়সার। প্রথমে বিএনপিতে যোগ দিলেও পরে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি হয়ে কৃষি প্রতিমন্ত্রী হন। ২০১৩ সালের ২১শে মে মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারকে। একই বছরের ৩০ জুলাই শর্তসাপেক্ষে জামিন এবং ১৪ নভেম্বর অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের পর এক যুদ্ধশিশুসহ ৩১ জন সাক্ষ্যদেন তার বিরুদ্ধে। একই বছরের ২০ আগস্ট বিচারকার্য শেষ হওয়ার সাড়ে ছয়মাস পর দেয়া হলো চূড়ান্ত রায়।