মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ে মরিয়া বিএনপি জনতার মঞ্চ বা হেফাজত স্টাইলে কর্মসূচি পালন করতে চায়। দলটির লক্ষ্য এ বছরের মে মাস নাগাদ নির্বাচন আদায়। এর আগে সংলাপে বসতে সরকারকে বাধ্য করা। এছাড়া চাপে ফেলে নির্বিঘ্নে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। এসব লক্ষ্য পূরণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মিত্রদের জানুয়ারিতে এমন কর্মসূচির বার্তাই দিয়েছেন। বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের আভাস পেয়েই সরকার কঠোর অবস্থানে গেছে। সরকার কোনোভাবেই কাউকে হেফাজতের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দিবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একটি সূত্র swadeshnew24 কে এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, এ পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সহসা কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার চাচ্ছে, খালেদা জিয়া তার বাসভবনে ফিরে যান। এর ফলে তার (খালেদা জিয়া) ওপর থেকে গণমাধ্যমের ফোকাস (দৃষ্টি) কমে আসবে। গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির গুলশান অফিস ও খালেদা জিয়া কেন্দ্রিক গণমাধ্যমের সংবাদে তারা কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা। রিজভী আহমেদকে হাসপাতালে স্থানান্তরের ফলে পল্টন কেন্দ্রিক মাথাব্যথা আর নেই বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি সুপরিকল্পিতভাবে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি পালনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। খালেদা জিয়া তার দুর্নীতিবাজ ছেলেক রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার লক্ষ্য যে কোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। তবে তার এ অভিলাষ পূরণ হবে না।
সরকারের কাছে তথ্য আছে জানুয়ারিতে এ ধরনের কর্মসূচি দেয়ার বিষয়ে বিএনপিতে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জনতার মঞ্চ বা হেফাজতের মতো কর্মসূচি কেন্দ্র করে বিস্ফোরক ও হাত বোমার মজুদ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার অবস্থানের জন্য বিএনপির গুলশান অফিস ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রস্তুত করা হবে। প্রয়োজনে পল্টন কার্যালয়ে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান করে টানা কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি সরকারের পতন ঘটাতে চান। এজন্য পল্টন কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের রুম তৈরিও করা হয়। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।
সরকারের ওই সূত্রটি জানায়, তাদের কাছে তথ্য আছে খালেদা জিয়া অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচন উপলক্ষে সংলাপে বসার জন্য সরকারের ওপর দুদিক থেকে চাপ অব্যাহত রাখতে চান। এক আন্দোলন, দুই বিদেশী কূটনীতিকদের মাধ্যমে। সংলাপ হলে মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়াও তার প্রধান দাবি থাকবে ছেলে তারেক রহমানকে নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ।
সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্রটি জানায়, কিছুদিন ধরেই খালেদা জিয়া তার দলের নেতাকর্মীদের মে মাস নাগাদ মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলে আসছেন। গুলশান কার্যালয়ে দেখা করতে গেলে নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়াপারসনের কাছ থেকে এমন নির্দেশনা পাচ্ছেন বলে গোয়েন্দারা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়কে অবহিত করেছে। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতারের পর এ তথ্যের সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারপর থেকেই বিএনপিকে মোকাবেলায় সরকার জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
দেশে গুজব রয়েছে, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ব্যাপারে সরকারের ওপর মহলে আলোচনা হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের একজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে জানান, তারা এখনই এত কঠোর সিদ্ধান্তে যাবেন না। তবে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে জন্য বিএনপিকে চাপে রাখার সব ধরনের কৌশল তারা প্রয়োগ করবেন।