জসিান আহমদে, চুয়াডাঙ্গা প্রতনিধি: ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন যখন ঈর্শ্বনীয়, বিশেষ করে অর্থনিতি ও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে চলেছে দূর্বার গতিতে, ঠিক সেই সময় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সেই শিক্ষাকে ব্যবহার করছে বানিয্যিকিকরনে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদেও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
চুয়াডাঙ্গার দুইটি ঐতিহ্যবাহি বিদ্যালয় ভি, জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উঠেছে ভর্তি ফি বাবদ অতিরিক্ত সেশন চার্জ আদায়ের অভিযোগ। নির্ধারিত এই শেসন চার্জের টাকা যোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন অনেক অবিভাবক। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার প্রধান দুইটি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রতিবছর মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেনিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে। বিদ্যালয় দুটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। লেখাপড়া করার সুষ্ঠ পরিবেশ, যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক এবং লেখাপড়ার জন্য যৎ সামান্য খরচের কারনে জেলার প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কারন ছারা স্কুলগুলোতে হঠাৎ করে কেন বা কি কারনে বাৎসরিক সেশন ফি বাড়ানো হলো তা বিদ্যালয়ের সকল শ্রেনির শিক্ষার্থীদের অবিভাবকদের প্রশ্ন।
ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ি ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি স্কুলে ভর্তি ফরমের মূল্যবৃদ্ধি ও সেশন চার্জ সর্বোচ্চ আদায় করতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, গত ৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট সেল কর্তৃক জারি করা নির্দেশনার আলোকে ভর্তি ফি ও সেশন চার্জ সর্বোচ্চ আদায় করা যাবে। নীতিমালায় ভর্তি আবেদন ফরমের মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আগে এটি ছিল ১০০ টাকা। সেশন ফি গত ৬ জুলাইয়ের আগে ছিল ৭০০ টাকা। এবার থেকে তা বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। বর্ধিত এই সেশন চার্জ ২০১৬ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।
সরকারি এই বিদ্যালয় গুলোতে অধ্যয়নরত প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে সবার পরিবার সামর্থবান নয়। এমন অনেক বাবা আছেন যারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবার চালান। এত পরিশ্রমের মধ্যেও সেই সকল পরিশ্রমি পিতা তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার লক্ষে সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠান।
যেখানে সামর্থহীন বাবাদের নুন আনতে পানতা ফোরায়, সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার টাকা যোগার করতে হিমসিম খাচ্ছেন সেখানে বর্ধিত এই সেশন চার্জ “মরার উপর খাড়ার ঘা”র মতন পিড়া দিচ্ছে। এমন অনেক শিক্ষার্থীর উপার্জনক্ষম পরিবারের সদস্য আছেন যারা আর তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাবেননা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থীর পিতা বলেন, আমি একজন সামান্য চায়ের দোকানী। সকাল সাড়ে সাতটায় দোকান খুলি আর রাত দেড়টায় বন্ধ করি। যা আয় হয় তা দিয়ে খেয়ে থেকে কোন রকম দিন কাটে। শুনলাম মেয়ের স্কুলে সেশন ফি বাবদ হাজার টাকার উপরে খরচ করতে হবে। আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। দুই বেলা চাউল আর সমিতির টাকা দিয়েতো বিষ খাওয়ারও টাকা পকেটে থাকেনা। অশ্রসিক্ত এই কথাগুলো প্রচন্ড আক্ষেপের সাথে বলেন তিনি।
বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অবিভাবকসহ জেলার সচেতন মহলের দাবি, সরকার যেখানে শিক্ষাখাতকে এক রকম অবৈতনিক করার ঘোষনা দিয়েছে সেখানে সেশন ফি বাবদ এতটাকা দেওয়া একটি নি¤œমধ্যবিত্ব/নি¤œবিত্ব পরিবারের জন্য পাহাড় সমান বোঝাতে পরিনত হবে। প্রসঙ্গত আমাদের চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ট পরিবার কিন্তু নি¤œমধ্যবিত্ব জীবন যাপন করেন। যারাকিনা জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার তাগিদে লড়াই করে চলেছে আমৃত্যু পর্যন্ত। বছর ঘুড়তে না ঘুড়তেই নি¤œবিত্ব শ্রেনির এই সকল অবিভাবকদের মনে উদয় হচ্ছে একটি নতুন সমস্যা। আর সেই সমস্যার নাম সন্তানের বিদ্যালয়ের “সেশন ফি”। খাই আর না খাই যতই কষ্ট হোকনা কেন সেশন ফি’র টাকা আমাকে এনে দিতেই হবে। নইলে সন্তানকে ঘিরে যে স্বপ্ন এতদিন ধরে দিখেছি যে আমার এক নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।
এ ব্যপারে জাতীয় সংসদের হুইপ সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার সেলুন এমপিসহ জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন ভুক্তভোগি সবাই।
জসিান আহমদে
চুয়াডাঙ্গা