Saimur, SwadeshNews24.com: ছোটকালে থেকেই ছেলেটা অনেক পাগলাটে আর উড়ুনচন্ডী ছিল। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ছিল বলে সবসময় আদরটা সে বেশিই পেত। ছেলেটা পড়াশোনাসহ সব কিছুতেই ছিল বেশ মেধাবী। কিন্তু শুধু লেখাপড়ায় তার মনোযোগ ছিলনা, এ ক্ষেত্রে সে ছিল চরম ফাঁকিবাজি। সারা দিন শুধু অন্য কিছু নিয়ে পড়ে থাকতো। স্কুলজীবনের শেষের দিকে এক মেয়ের পাল্লায় পড়ে ছেলেটি যখন নষ্ট হওয়ার পথে, তখনও কেউ ভাবতে পারিনি এই ছেলেটা কোনদিন ঘুরে দাড়াবে! সবাই তখন ভেবেই নিয়ে ছিল আকাশের বুক থেকে হইতো আরেকটি সম্ভবময় তারা অকালে ঝরেই পড়বে। সেসময় ছেলেটি তার পছন্দের মেয়েটিকে এতই ভালবেসে ছিল যে, সে ঐ মেয়েকে না পাওয়ার বেদনায় আত্নহত্যার কথা ভেবেছিল। সেই ব্যর্থতায় পড়াশোনাও গোল্লায় গেল প্রায়। সবাই তাকে অবহেলার চোখে দেখতে লাগলো। কিন্তু মায়ের ভালবাসার কাছে সেই আত্নহত্যার সিদ্ধান্তও হার মানলো। ছেলেটি তার মায়ের ভালবাসা পেয়ে আবার নতুন করে জীবনে পথ চলতে শুরু করলো।
এবারের যাত্রাটা ছিল তার ভিন্ন পথের। সে পথে বাধা হয়ে দাড়ালো তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। কিন্তু মায়ের দোয়া বলে কথা! যার সাথে মায়ের দোয়া আছে, তাকে ঠেকায় কে? ছেলেটির মা ছেলেটিকে তার পরিবারের অগোচরে নতুন পথ চলায় অনুপ্রাণিত করলো। সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটি ধীরে ধীরে সবার চেয়ে আলাদা হয়ে উঠলো। এই ঘটনাটি ছিল আজ থেকে ১১বছর আগের। আজ ছেলেটি শত বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে খানিটা পথ চলে এসেছে, আরও অনেকটা পথ যেতে হবে বলে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই বছরেই ছেলেটি ঢালিউড অডিও ইন্ডাস্ট্রির সীমানা পেরিয়ে টালিউড ও বলিউড অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখতে যাচ্ছে।
সঙ্গীত জগতে বিশেষ অবদান রাখায় রাকিব মোসাব্বিরকে ২০১২ সালের নভেম্বরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র বর্তমন সংসদ সদস্য, ভৈরব ও কৈলিয়াচরের এমপি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তাকে সংবর্ধনা দেন। সেসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বাদল, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
ইতিমধ্যে তার সুর হাজারো বাঙ্গালির কাছে অতি পরিচিত হলেও, তার নাম আর বদনখানি এখনও সবার কাছে এতটা পরিচিত নয়। তারপরও ছেলেটি আল্লাহর উপর আস্থা রেখে বিশ্বাস করে- তার সুরের জাঁদু একদিন না একদিন পুরো পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়বেই……ছেলেটি আরর কেউ নয় এই প্রজন্মের অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা ও সংগীত পরিচালক রাকিব মোসাব্বির।
জন্মসূত্রে ভৈরবের এই শিল্পীর সুর ও সংগীতে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিকেরও বেশি জনপ্রিয় শিল্পী গান করেছেন।
এ পর্যন্ত রাকিব মোসাব্বিরের একক ও ফিচারিংয়ে প্রকাশিত অ্যালবামগুলো হলো- যারে আমার মন (২০০৮), বৈশাখ এলো (২০১০), মাধবীলতা (২০১০), জানি তুমি (২০১১), অভিমানী আকাশ (২০১২), সুখ পাখি (২০১৩), রোদেলা আকাশ (২০১৪), নন্দিনী (২০১৪), ভালোবাসা এমনই (২০১৪)। এছাড়া বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবামেও রাকিব কাজ করেছেন। এই বছর আসছে তার দুটি এলবাম রামু মিক্স এবং ভারত বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজিত এলবাম সাজনা। এছাড়া রাকিব কলকাতার আরও দুটি প্রজেক্ট এবং তার দুরন্ত ব্যান্ডের প্রথম এলবামের কাজ করছে। রাকিবের মিউজিক কম্পোজিশনে জনপ্রিয়তা পাওয়া কিছু গানের মধ্যে অন্যতম যারে আমার মন (রাকিব), পিরিতি (রাকিব), মাধবীলতা (কণিকা), মন পাঁজর (কাজী শুভ), জানি তুমি (শোভন), সুখ পাখি (রাকিব), অতলে অতলে (রাকিব/সাবা), আমার পরাণ (রাকিব/ খেয়া), সাত পাঁকের জীবন (রাকিব/ফারাবি), ভালবাসি শুধু তোমায় (রাকিব ও আনিসা), নন্দিনী (পোলক), তুমি বিহনে (রাকিব), প্রভৃতি।