আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ সাফল্য এনেছেন সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুর (৫০)। তিনি ঘাস চাষ, নার্সারি ও গবাদিপশু পালনে গুর“ত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পুরস্কার বাবদ তাকে একটি রৌপ্য প্রদান করেন। একজন দিনমজুর হিসেবে অতিকষ্টে জীবন জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন প্রতিমাসে ঘাস বিক্রি করে তার আয় হ”েছ প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তার এই ঘাসের আয় দিয়েই তিনি এখন কোটিপতি। তার এই সাফল্যে উদ্ধুদ্ধ হয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষক ঘাস চাষ করে এখন আত্মনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছেন। ২০০৫ সালে তার তিন সদস্যের সংসারে সম্পদ বলতে ছিল বসতভিটাসহ শুধু একবিঘা জমি। তাই ¯’ানীয় একটি সঞ্চয় সমিতির সদস্য হয়ে কিছু টাকা জমিয়ে তিনি সমিতি থেকে সাত হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাভী কিনেন। পরে পলাশবাড়ি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে গবাদি পশুর খাদ্য বাবদ নিজেই নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ শুর“ করেন। ওই বছরই তিনি প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে ঘাসের চারা সংগ্রহ করেন এবং কাটিং পদ্ধতিতে প্রথমে নিজেই ৫ শতক জমিতে ঘাস লাগান। একমাস পরপর একবছর পর্যন্ত সেই ঘাস কেটে নিজের গবাদি পশুকে খাওয়ানোর পরেও বাইরে বিক্রি করতে শুর“ করেন। এই ঘাস খাওয়ানোর ফলে তার গাভীও অনেক বেশি দুধ দিতে থাকে। এই দুধ আর ঘাস বিক্রয়লব্ধ থেকে অর্থ থেকেই তিনি অর্থ সম্পদে সমৃদ্ধ হতে থাকেন। ফলশ্র“তিতে আব্দুল গফুর বর্তমানে ১৬ বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস রোপন করেছেন। এরমধ্যে সাতবিঘা নিজের, তিনবিঘা জমি বন্ধক নেয়া হয়েছে। জমিতে ঘাস উৎপাদন খরচ পড়েছে ২০ হাজার টাকা আর প্রতিমাসে ঘাস বিক্রি করে তার আয় হ”েছ ৯০ হাজার টাকা। ফলে সব খরচ বাদ দিয়ে তাঁর মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার টাকারও বেশি। এই ঘাস বিক্রির আয় থেকেই তিনি এখন পাঁকা বাড়ি, দশবিঘা জমি, দুইটি গাভী ও দুইটি শ্যালো মেশিনসহ প্রায় সোয়া কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ নিয়েছেন। পাঁচজন শ্রমিক তার ফার্মে কাজ করেন। তারা প্রতিদিন রিকসা-ভ্যান যোগে পলাশবাড়ি, ঢোলভাঙ্গা, ধাপেরহাট ও গাইবান্ধা শহরে ঘাস বিক্রি করেন। আব্দুল গফুর বলেন, ভবিষ্যতে আরো আগামীতে দশবিঘা জমিতে ঘাসচাষসহ তার ডেইরি ফার্ম করার পরিকল্পনা রয়েছে। নেপিয়ার এই ঘাস চাষের সাফল্যে উদ্বৃদ্ধ হয়ে সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রামের কৃষক মাসুদ মিয়া, সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুর রশিদসহ অর্ধশতাধিক কৃষক ঘাস চাষ করেছেন। কৃষক মাসুদ মিয়া বলেন, আগে এই ঘাস সম্পর্কে আমার কিছু জানা ছিলনা। গফুর ভাইয়ের সাফল্য দেখে আমিও একবিঘা জমিতে ঘাসচাষ করছি।