এসএসসি পরীক্ষার সময় ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদে।
দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে রবিবার পয়েন্ট অব অর্ডার আলোচনায় সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা সমালোচনা করেন। আলোচনার সূত্রপাত্র করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করে হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে যত কঠোর হতে হয়, সেটাই করবে সরকার।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মানুষ হলে তো তার কাছে আবেদন করা যায়। অমানুষের কাছে আবেদন করে লাভ নেই। তাই আইনের বিধি-বিধানের ভেতর থেকেই ব্যবস্থা নিয়ে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। এতে যত কঠোর হতে হয় আমরা হব।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যদি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাবেন— তার এ স্বপ্ন দেখা ভুল হবে। আপনি (খালেদা) জামায়াতের হাতের পুতুল হয়ে নাচছেন। সারাবিশ্ব আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশেও জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। যাদের হাতের পুতুল হয়ে আপনি নাচছেন, তারা কলার ছোবরার মতো আপনাকে ফেলে দিয়ে চলে যাবে। যেমন জানজুয়ারা গিয়েছিল।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী থেকে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস শুরু করেছেন খালেদা জিয়া। অনেকে বলে তাদের বের হয়ে যাওয়ার সন্মানজনক সুযোগ দেওয়ার কথা। বিশ্ব ইজতেমার সময় তবলিগ জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল খালেদার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দেখা দেননি। তখন তো তিনি বেরিয়ে আসতে পারতেন।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, উনি ইচ্ছা করলে জিয়ার কবর জিয়ারত করতে যেতে পারেন। কিন্তু তিনি তা যাননি। উনার ছেলে ফেরারি আসামি হওয়া সত্ত্বেও তার মৃত্যুর খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী সমাবেদনা জানতে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ছোট্ট গেট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেও দেখা করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরে এসেছেন।
খালেদা হেরে গেছেন : আলোচনায় অংশ নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, খালেদা জিয়ার অবরোধ-হরতালে জনগণ নেই, আছে কিছু সন্ত্রাসী-বোমাবাজ। খালেদা জিয়া হেরে গেছেন, কিন্তু স্বীকার করছেন না।
তিনি বলেন, পাকিস্তানী হানাদাররা যখন বুঝতে পেরেছিল পরাজিত হবেন তখন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় পরাজয় নিশ্চিত জেনেই খালেদা জিয়ারা গোটা দেশের মানুষকে জিম্মি করে পুড়িয়ে হত্যা করছেন।
মন্ত্রী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেও হরতাল দিয়ে খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন, তার কাছে দেশ ও দেশের ভবিষ্যত বড় নয়, ক্ষমতাই বড় কথা। কিন্তু সন্ত্রাস-নাশকতা ও মানুষ হত্যা করে খালেদা জিয়া কোনোদিন ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। চুনোপুটি নয়, নাশকতা-সহিংসতার হুকুমদাতাদের গ্রেফতার করতে হবে।
খালেদার বিরুদ্ধে ৪২টি মামলা করার দাবি : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু বলেন, আশা করেছিলাম এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল দেবেন না। খালেদা জিয়া একটা প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আজ তারা ড্যামকেয়ারভাবে চলছে। উনাকে বুঝানো হয়েছে ম্যাডাম এক সপ্তাহ অবরোধ-হরতাল চালিয়ে গেলে এই সরকার পড়ে যাবে। উনারা ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে যে মানুষ মারা হচ্ছে এর দায়-দায়িত্ব খালেদাকেই নিতে হবে। এ পর্যন্ত হরতাল অবরোধে ৪২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই ৪২টি খুনের জন্য ৪২টি মামলা হবে খালেদার বিরুদ্ধে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতির নামে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশে যা ঘটাচ্ছেন তা সমসাময়িক বিশ্বেও ঘটেনি। আজকে বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা তৈরী করতে খালেদা জিয়া পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। খালেদা জিয়া ন্যক্কারজনক মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েই যাচ্ছেন। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এ সব অপকর্ম করে যাচ্ছেন। পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সামারি কোর্টের মাধ্যমে বিচারে তিনি নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
আরাফাত রহমান কোকো দণ্ডিত আসামি : খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আরাফাত রহমান কোকো একজন দণ্ডিত আসামি। শুধু বাংলাদেশের আদালতে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার বিরুদ্ধে সাজা হয়েছে। তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। যে বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ সমবেদনা জানাতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী একজন মাকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। যার কোনো বিবেক নাই, তিনি বিবেকহীন। আজকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে তিনি খেলছেন। যিনি বলছেন পরীক্ষা বড় নয়, ক্ষমতা বড় বিষয়। আজকে ক্ষমতালিপ্সু একজন নেত্রীর জন্য আমাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে না।
তিনি বলেন, এই খেলা বাংলাদেশে বন্ধ করতে হবে। যে কারণে পরীক্ষার দিন হরতাল দেওয়া হলো, এটার উদ্দেশ্যে কী? আমরা দেখছি গত কয়েকদিন যাবৎ বিনা কারণে হরতাল-অবরোধ দেওয়া হচ্ছে। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে জনগণকে জিম্মি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চেষ্টা করছে।
সরকারি দলের আবদুল মান্নান বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সময় কর্মসূচি স্থগিত না করে খালেদা জিয়া অবরোধের সঙ্গে তিন দিনের হরতাল ডাকলেন। এটা কোনো রাজনীতি নয়, এটা সন্ত্রাস-নৈরাজ্য। জিয়া পরিবারকে দুর্নীতির বিচার থেকে রক্ষা, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির হাত থেকে রক্ষা এবং জামায়াতকে নিবন্ধন ফেরত দিতেই খালেদা জিয়া নাশকতা-নৈরাজ্যে করে লাশের মিছিল দীর্ঘ করছেন। এদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নেই।
তারানা হালিম বলেন, খালেদা জিয়া আগামী প্রজন্মকে হানাদার বাহিনীর মতো মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র করছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। পেট্টোলবোমা ও নাশকতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে আজ একাত্তরের মতোই গর্জে উঠতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পেট্টোলবোমা নিক্ষেপকারী ও হুকুমদাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে তিনিও নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন রক্ত ঝরছে, পেট্রোলবোমায় ঝলসে মানুষ মরছে। গোটা জাতি আজ এমন নৃশংসতার বিরদ্ধে ধিক্কার দিচ্ছে। অবশ্যই দেশকে মৃত্যু উপত্যকা বানানোর ষড়যন্ত্র রুখতে হবে।
সরকারি দলের শামীম ওসমান বলেন, খালেদা জিয়া শুধু দেশের মানুষ নন, আল্লাহর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনেও যিনি হরতাল দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেন, বিশ্ব ইজতেমার দিনেও অবরোধ ডাকেন, সেই খালেদা জিয়ার কাছে কোনো আবেদন বা অনুরোধ জানিয়ে লাভ নেই। দেশবাসী আর কথা নয়, এবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ্যাকশন দেখতে চায়।