চলমান অবরোধ-হরতাল নিয়ে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকটি টেলিফোন সংলাপ নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে সর্বত্র। যাতে তিনি দলীয় নেতাদের নানা রকম নির্দেশনা দিতে শোনা গেছে। বাংলালিকস নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা কথোপকথন ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। আর বাংলালিকসের অডিও ফাইলগুলোর শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে খালেদার এসব নির্দেশ নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যেই। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। তার এই ফোনালাপ নিয়ে গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকেও অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলালিকস ইতিমধ্যে খালেদার পাঁচটি কথোপকথন প্রকাশ করেছে। এগুলোতে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে খালেদার কথোপকথন শোনা যায়।কথোপকথনের প্রথম টেপটিতে অন্য প্রান্ত থেকে খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ম্যাডাম, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রোগ্রামটা কি অন থাকবে জবাবে খালেদাকে বলতে শোনা যায়- ‘এখন পর্যন্ত অন থাকবে। কিন্তু ওখানে কেউ থাকবে না। ছেলে-পেলেরা সব রাস্তায় থাকবে। ভেতরে কাউকে আমি দেখতে চাই না। ছেলেরা সব রাস্তায় যাবে।’ঢাকা মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামকে ‘লোক নামানোর’ নির্দেশ দেন খালেদা। তিনি বলেন, ‘খোকা আর সালামকে বলে দেন, বেশি করে লোক নামাতে। ওরা যদি লোক নামাতে না পারে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিক। আমি রাস্তায় লোক দেখতে চাই।’ এর পর খালেদাকে বলতে শোনা যায়- ‘আপনি কি ওদের সঙ্গে কথা বলেছেন’অপর প্রান্ত থেকে যখন ‘জি’ বলে আরও কিছু বলা শুরু হয়, তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘না না, ওই যে, অন্যদের, আপনি যাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওরা এখনো নামেনি কেনৃ আরও নামাতে বলেন।’ ‘আমাদের লোকজনদের বল, সব প্রেসক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন) ছেড়ে রাস্তায় চলে যাও। কাউকে আমি ওখানে দেখতে চাই না। ওখানে শুধু মুক্তিযোদ্ধা যেগুলো আসছে, ওই কয়টা থাকবে। আর সব রাস্তায়।’ ফোনালাপের দ্বিতীয় কথোপকথনে তৎকালীন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামকে খালেদা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি করে যত পার পাঠাও লোক। দেরি কর না, দেরি করলে অসুবিধা হয়ে যাবে। বুঝছ।’ তৃতীয় কথোপকথনে বিএনপি চেয়ারপারসন একজনকে নির্দেশ দেন জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সক্রিয় করতে। ‘জামায়াতকে বলেন, ওদের লোকজন নামাই দিতে বলেন। শুধু ঢাকায় না, সব জায়গায়।ৃ আর মৃদুলকে বলেন যে ও ওর জায়গাটা ভালো করে করতে।’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে চতুর্থ কথোপকথনটি হয় সাদেক হোসেন খোকার। এতে খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার কমিশনারদের বলুন, যার যার এলাকায় নিয়ে যাক। রাস্তাগুলো ব্লক করে দিক আর কী।ৃ এলাকাভিত্তিক।’পঞ্চমটিতে চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে, (যিনি কূটনীতিক ছিলেন) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি নিয়ে কথা বলেন, যাতে নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের নাম এসেছে। এর মধ্যে ডা. শাহাদাত দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ওই ফোনালাপে খালেদাকে বলতে শোনা যায়, ‘শাহাদাতকে বলেছি, একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছি। খসরু যেন কোনো কাজে বাধা না দেয়, তাকে এই মেসেজ দেন।’ অন্য প্রান্ত থেকে কিছু বলতে চাইলে খালেদা বেশ জোরের সঙ্গে বলেন, ‘সে বাধা দিচ্ছে, আপনি তাকে বলে দেন। বলে দেন যে কোনো কাজে বাধা দেবে না। বাধা দিলে আমি ইমিডিয়েটলি রিমুভ করব তাকে।’ এক পর্যায়ে ফোনের ওপ্রান্তের ব্যক্তির ওপর বিরক্ত হয়ে খালেদা বলেন, ‘আপনি ডিপ্লোম্যাট ছিলেন, বাট ইউ ডোন্ট নো হাউ টু টক।’ ‘আপনি ইমিডিয়েটলি খসরুকে বলেন, কোনো বাধা দেবে না, বুঝছেন কি না।’ এদিকে গত রাত সাড়ে ৭টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় কথোপকথনগুলো যখন ইউটিউবে শোনা যাচ্ছিল ঠিক তখনই হঠাৎ করে সেগুলো রিমুভ হয়ে যায় ইউটিউব থেকে।