বহুল আলোচনার জন্ম দেয়া মঙ্গল গ্রহে আল-কুরআন নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিসরের যুবক মুহাম্মদ আবদু সালাম।
জানা গেছে, মঙ্গলে মনুষ্য বসতি স্থাপনের জন্য ‘অফেরতযোগ্য যাত্রায়’ অংশ নিতে আগ্রহী প্রতিযোগীদের তালিকা প্রকাশ করেছে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘মারস ওয়ান’।
স্থায়ী মানব বসতি গড়ার মিশন নিয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে চারজন নারী-পুরুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ‘মারস ওয়ান’। ধাপে ধাপে বাছাইয়ের মাধ্যমে মাত্র চার ভাগ্যবানকে বেছে নেওয়া হবে। এই যাত্রা একমুখী, এসব অভিযাত্রীদের কখনো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে না।
সম্প্রতি আবেদনকারীদের ছোট তালিকা প্রকাশ করেছে মারস ওয়ান। সেখানে বিভিন্ন দেশের ৯৯ জনের নাম রয়েছে। ওই তালিকার একজন হলেন- মিসরের যুবক মুহাম্মদ আবদু সালাম।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি আমাকে মঙ্গল গ্রহে আল-কুরআন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে, আমিই প্রথম ব্যক্তি-যে পবিত্র কোরআনকে অন্য গ্রহে নিয়ে যাবো। বিষয়টি অবশ্যই রোমাঞ্চকর। আমি মুহূর্তটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’
‘অফেরতযোগ্য যাত্রা’ নামকরণের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন মহান আল্লাহ তায়ালার হাতে’। তার এ ভ্রমণে জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছ। চূড়ান্তভাবে মনোনীত হলে সালাম ও তার বন্ধুরা মঙ্গলে জীবিত থাকার জন্য বৃক্ষরোপণ থেকে শুরু করে অন্যসব প্রচেষ্টা চালাবেন বলেও জানান তিনি।
তার সাথে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য আমেরিকা প্রবাসী অন্য আরেকজন ইরাকি নাগরিকও নির্বাচিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তালিকায় এই দু’জনই হলেন অফেরতযোগ্য যাত্রার যাত্রী তালিকায় থাকা মুসলমান।
নির্বাচিতদের মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর জন্য টানা ৭ বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং ২০২৩ সালে প্রথম দলকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং সুবিধা দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হবে।
অভিযান প্রসঙ্গে আবদু সালাম বলেন, ‘যদি আমাকে মঙ্গল গ্রহে কোরআন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় তাহলে আমি ভীষণ খুশি হব। আমার ইচ্ছা আমি মঙ্গলে গিয়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করব, রোজা রাখব, অজু ও তায়াম্মুম করব এবং আজানের সময় আজান দেব।’
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) একটি ধর্মীয় সংগঠন মঙ্গল গ্রহে যাওয়াকে ইসলাম বিরোধী বলে ঘোষণা করেছে। খালিজ টাইমসের বরাতে যুক্তরাজ্যের দ্য ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইউএইর জেনারেল অথরিটি অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এনডোমেন্টস (জিএআইএই) সম্প্রতি এ ফতোয়া দেয়।
জিএআইএইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের একমুখী যাত্রা জীবনের জন্য সত্যিকারের ঝুঁকি সৃষ্টি করে এবং ইসলাম তা কখনোই অনুমোদন করে না। কোনো ব্যক্তি মঙ্গল ভ্রমণ করলে তিনি জীবিত ফিরে নাও আসতে পারেন। এটা মৃত্যুর চেয়েও কষ্টকর। যারা এই যাত্রায় অংশ নেবেন, তারা কোনো ধর্মীয় কারণ ছাড়াই মারা যেতে পারেন। এ কারণে তারা আত্মহত্যার শাস্তি পাবেন।
জিএআইএইর ফতোয়া কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক হামাদা বলেছেন, সম্ভাব্য সব ধরনের বিপদ থেকে জীবন রক্ষা এবং নিজেকে নিরাপদ রাখার বিষয়টি সব ধর্মে স্বীকৃত। নিজেকে এবং পরস্পরকে হত্যা না করার বিষয়টি পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।
২০১৩ সালের এপ্রিলে ‘মারস ওয়ান’ নামের নেদারল্যান্ডসের একটি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা মঙ্গলগ্রহে মানববসতি গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।