জাহিদুর রহমান তারিকঃ-
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ও পরিবেশ বিনষ্টকারী ফসল তামাকের চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলে দিনদিন বেড়েই চলেছে তামাক চাষ। পরিবারের বড়দের পাশাপাশি ছোট শিশুরাও তামাক চাষের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তামাক চাষে উৎসাহিত করার অভিযোগ রয়েছে তামাক কোম্পানীর বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানাগেছে এবার জেলার ৬ উপজেলাতে তামাক চাষ হয়েছে ৯ শ’২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি ১ বেল (৭০ কেজি) তামাক প্রকার ভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক চাষে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আয় হয় ১ লক্ষাধিক টাকা। আর তামাক চাষে পরিবারের বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও তামাক ক্ষেত পরিচর্যা থেকে শুরু করে তামাক পাতা সংগ্রহ করছে । এবং সেই পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিক্রয় উপযোগী করা পর্যন্ত শিশুরা কাজ করছে। ফলে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে তামাক চাষ বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং তামাক চাষে ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন ভাবে উৎসাহ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে তামাক কোম্পানীর বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মধুপুর গ্রামের তামাক চাষী লিয়াকত আলী জানান, তামাক কোম্পানীগুলো আমাদের বিভিন্ন সময় তামাক চাষের জন্য ঋণ দেওয়াসহ নানাভাবে সাহায্য করে থাকে, যা আমরা অন্য কোন চাষে পায় না। আর তামাকের ফলন ভালো হলে আমাদের অনেক লাভ হয়। অল্প জমিতে বেশি লাভ হওয়ায় আমরা তামাক চাষ করি। তিনি আরো জানান, আমরা জানি তামাক শিশুসহ সকলের জন্য ক্ষতিকারক। তারপরও আমরা খরচ বাঁচানোর জন্য শিশুদের দিয়ে এই কাজ করাই। জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, তামাক চাষ মানবদেহে ও পরিবেশের জন্য খারাপ। আর যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষের সাথে জড়িত থাকলে সে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যানসারের মত কঠিন রোগে আক্রান্ত। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা যায়। তাই মানবস্বাস্থ্যের ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই তামাক চাষ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ্ মো. আকরামুল হক জানান, তামাক চাষ হঠাৎ করেই বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু তামাক চাষ বন্ধে চাষীদের আমরা উৎসাহিত করে চলেছি। ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খলিল আহমেদ জানান, তামাক কোম্পানীগুলো নিয়ন্ত্রণে আমাদের তেমন কোনো আইন নেই। তবে তামাক চাষে যাতে চাষীরা নিরুৎসাহিত হয় সে জন্য তামাকের ক্ষতিকারক বিষয়ের উপর অমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রচারনা চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শিশুদের দিয়ে তামাকের কাজ করানো শ্রম আইনের লঙ্ঘন হলেও ঝিনাইদহে যে শিশুরা তামাকের কাজ করে তারা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। দরিদ্র পরিবারের শিশুগুলো যাতে এই ক্ষতিকারক কাজে লিপ্ত না হয় এ জন্য তাদের পরিবারগুলোকে ক্ষুদ্র ঋণসহ নানা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান এবং এর ক্ষতিকর দিক বুঝিয়ে সচেতন করে তোলা হচ্ছে।